‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কারবালার শোকের নানা প্রতিকৃতি দিয়ে সাজানো হয়েছে মিছিল। বিবি ফাতেমার স্মরণে মিছিলের শুরুতেই বহন করা হচ্ছে দু’টি কালো গম্বুজ। বিভিন্ন নিশান বহন করছেন মিছিলের অংশ নেওয়া হাজারো মানুষ।

মিছিলে তাজিয়া তৈরি করা হয়েছে ইমাম হোসেন (রা.)-এর সমাধির আদলে। এছাড়া অংশ নেওয়া অনেকেই বুক চাপড়ে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ বলে মাতম করছেন।

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাজধানীর হোসেনি দালান থেকে শুরু হওয়া তাজিয়া মিছিলের চিত্র এটি। যার মাধ্যমে কারবালার মর্মান্তিক শোককে স্মরণ করা হচ্ছে।

হিজরি সালের ১০ মহররম কারবালার প্রাঙ্গণে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসেনের মৃত্যুর দিনটি মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের দিন হিসেবে আশুরা পালিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে পবিত্র আশুরা।

মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর পুরান ঢাকার হোসেনি দালান থেকে তাজিয়া মিছিলটি শুরু হয়। তাজিয়া মিছিল সমন্বয়ের মূল দায়িত্ব পালন করছে হোসেনি দালান ইমামবাড়া ম্যানেজমেন্ট কমিটি।

কারবালার রক্তাক্ত স্মৃতির স্মরণে মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত নিজের দেহে ছুরি দিয়ে আঘাত করে রক্ত ঝরিয়ে মাতম করে থাকেন। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের অনুরোধে এবার ছুরি দিয়ে মাতম করা হচ্ছে না। তবে গায়ে রঙ লাগিয়ে কারাবালার সেই রক্তপাতের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে।

এবারের মিছিলে দুইটি ঘোড়া রয়েছে, যার মধ্যে একটিকে রঙ দিয়ে রক্তের রূপ দেওয়া হয়। যার মাধ্যমে যুদ্ধ শেষে রক্তাক্ত ঘোড়ার অবস্থানও তুলে ধরা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে বিভিন্ন অনুষঙ্গ দিয়ে মিছিলে কারবালার রক্তাক্ত প্রান্তরকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা চালানো হয়েছে।

হোসেনি দালান ইমামবাড়ি থেকে শুরু হওয়া তাজিয়া মিছিলটি বকশীবাজার রোড, নিউ মার্কেট হয়ে ধানমন্ডি লেকের ‘প্রতীকী কারবালা’ প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে সকাল হতেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে মূল মিছিলে যোগ দিয়েছেন অনেকেই। মূল তাজিয়া মিছিলে যোগ দিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে কালো কাপড় পরে হোসেনি দালানে আসতে থাকেন মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা। নিরাপত্তা বিবেচনায় মিছিলে অংশ নিতে ইচ্ছুক প্রতিটি ব্যক্তিকে পুলিশের তল্লাশি চৌকির মধ্য দিয়ে যেতে দেখা গেছে।

হোসেনি দালানের চারপাশেই রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী। পোশাকধারী র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

এদিকে, তাজিয়া মিছিল শুরুর পর মিছিলের সামনে ও পেছনে বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

যে সড়ক দিয়ে মিছিল যাচ্ছে পুরো রাস্তা ঘিরে নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। রাস্তার পাশের ভবনগুলোর রুফটপ থেকেও পুলিশ সদস্যদের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে দেখা গেছে। প্রস্তুত রয়েছে পুলিশের জলকামান ও সাঁজোয়া যান।

আশুরার তাজিয়া মিছিলে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি বহন আগে থেকেই নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। একইসঙ্গে আতশবাজি ও পটকা ফোটানোও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

ডিএমপি জানায়, তাজিয়া মিছিলকে কেন্দ্র করে অনেক সময়েই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। যা নগরবাসীর মনে আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টিসহ জননিরাপত্তার প্রতি হুমকি হয়ে ওঠে। এ কারণে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

রাজধানীর পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জের বিবিকা রওজা, পুরানা পল্টন, মগবাজার, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প ও মিরপুর ১১ নম্বরে বিহারি ক্যাম্পগুলোয় আশুরা পালিত হয়। এসব এলাকাগুলোতেও নিরাপত্তা জোরদার করেছে ডিএমপি।

হোসেনি দালানের দায়িত্বরত ফিরোজ হোসাইন বলেন, বরাবরের মতো এবারো আমরা তাজিয়া মিছিল আয়োজন করেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি আমাদেরও পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন রয়েছে।