
রবিউল ইসলম,টঙ্গী ॥ গাজীপুরের টঙ্গী একটি শিল্প নগরী এলাকা। এই শিল্প নগরী এখন যেন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। যেন দেখার কেউ নেই। পরিবেশ বিপর্যয় শুরু হয় মানুষের দেহ থেকেই। আমরা মানুষ যেখানে সেখানে থু থু ফেলা পরিবেশের দূষণ করেছি । এখন কোন কোন এলাকায় পরিবেশ দূষণ চরম সীমা অতিক্রম করেছে। উপায় খোঁজা হচ্ছে কিভাবে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী টঙ্গী শিল্পা ল ও টঙ্গী এলাকা তেমনি একটি এলাকা। টঙ্গীর বুক চিরে বয়ে চলা তুরাগ নদীর পানি কালো দুর্ঘন্ধযুক্ত ও ক্ষতিকর রাসায়নিক বর্জ্যে পূর্ণ হয়ে গেছে। এ জল এখন প্রাণীকুলের ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে গেছে। আবাসিক এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা সরু ও আবর্জনার স্তুপে ঠাসা। সে কারণে বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ইতিমধ্যেই গাজীপুর ও টঙ্গী নিয়ে সিটি করপোরেশন হয়েছে। দাপ্তরিকভাবে এলাকার মর্যাদা বাড়লেও জলাবদ্ধতা সমস্যার কোন সুরাহা হয়নি। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বৃষ্টিতে এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
সামান্য বৃষ্টিতে গাজীপুরের টঙ্গী শিল্পা লসহ আশপাশ এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ সময় শিল্প-কারখানা, বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়ে। এতে শিল্পপণ্য উত্পাদন বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। এলাকাবাসী জানান, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে সামান্য বৃষ্টিতে এলাকার বেশির ভাগ স্থান পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া ভাঙাচোরা রাস্তা ও ড্রেনের কারণেও এলাকায় পানি জমে থাকে। এতে বিড়ম্বনায় পড়েন চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ শিক্ষার্থীরা। এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসে দ্রুত রাস্তাঘাট পুর্ননির্মাণ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতির আহ্বান জানান তারা।
জলাবদ্ধতার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, কর্তৃপক্ষের চরম ব্যর্থতা ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে এই করুণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যেমন: পানির প্রধান বহির্গমন ড্রেন না থাকা, প্রয়োজনীয়সংখ্যক ড্রেন না থাকা, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ড্রেনে ঢাকনা না থাকায় ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে যাওয়া, ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার না করা, বাড়ি-মার্কেট নির্মাণের সময় ড্রেন দখল, বাসা-বাড়ির তুলনায় রাস্তা উঁচু হয়ে যাওয়ায় রাস্তার পানি বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে ঢোকাসহ আরো অনেক কারণ উল্লেখযোগ্য।
টঙ্গীর প্রায় ৮৫ ভাগ বাড়িঘর আশির দশকে তৈরি। প্রতিবছর যেসব বাড়িঘর নির্মাণ হচ্ছে সেগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে। এর ফলে বাড়ি ঘরের পানি রাস্তায় না নেমে রাস্তার পানি বাড়িঘরে ঢুকে পড়ছে। ড্রেনেজ সমস্যা হচ্ছে টঙ্গীবাসীর অন্যতম সমস্যা। প্রবল বর্ষণে দত্তপাড়া খলিলগেট, হোসেন মার্কেট, লেদুমোল্লা রোড, টঙ্গী থানা গেট, কলেজ গেট, পৌরসভা, সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি এন্ড কলেজ, টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ, সরকারি হাসপাতাল, বিসিক কার্যালয়, শ্রম কল্যাণ কার্যালয়সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, বইপুস্তক ভিজে নষ্ট হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন পুকুর ও মৎস্য খামারের কয়েক কোটি টাকার মাছ বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গীর আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুরা পর্যন্ত ষোল ফুট চওড়া বহির্গমন নালা আছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আর্থিক সংকটের কারণে পানির প্রধান বহির্গমন নালার কাজ সমাপ্ত করতে পারেনি। গাজীপুরা পর্যন্ত জলাবদ্ধতার পানি পার্শ্ববর্তী নদী ও বিলে নির্গমনের জন্য প্রধান ড্রেন নির্মাণ সম্পন্ন করা জরুরি।
এই সমস্যার রাতারাতি সমাধান সম্ভব নয়। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের উচিত হবে এই বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণ চিহ্নিত করা। প্রধান ড্রেনের সাথে শাখা ড্রেনের সংযোগ করে কিভাবে দ্রুত পানি সরানো যায় সেভাবে পরিকল্পনা করতে হবে। এখানে তুরাগ নদীর বিষয় পরিকল্পনায় থাকা জরুরি। বৃষ্টির পানি ড্রেনের মাধ্যমে তুরাগ নদীতে সরাতে পারলে নদীর নাব্য বৃদ্ধি পাবে। সরু থাকার কারণে বর্তমানে ড্রেন উপচে পানি রাস্তা ও বাড়ি ঘর প্লাবিত করে। আরও একটি বিষয় নতুন করে তৈরি করা ড্রেনের প্রস্থ অবশ্যই বেশি রাখতে হবে। কারণ এতে বেশি পরিমাণ পানি দ্রুত সরতে পারবে। পরিবেশ সংরক্ষণ শুধুমাত্র সিটি করপোরেশনের একার দায়িত্ব নয়। সাধারণ জনগণ তাদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য বর্জ্য ফেলে ড্রেন ভরাট করে রাখে। এজন্য এলাকার বাসিন্দাদের উচিত হবে এই অভ্যাস ত্যাগ করা।
এ ব্যাপারে বার বার স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সহসাই মিলছে না এ সমস্যার সমাধান। তবে দীর্ঘ তাপদাহের পর স্বস্তির বৃষ্টিতে অনেকেই খুশি। নেচে গেয়ে বৃষ্টিতে ভিজে শিশু কিশোররা মাতিয়ে তোলেন পুরো এলাকা।