
নিউজ ডেক্স: তাসমান সাগরের পূর্ব পাড়ে নিউজিল্যান্ড, পশ্চিম পাড়ে অস্ট্রেলিয়া। সাগর তাদের আলাদা করলেও দুই দেশের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব। তবে ক্রীড়াক্ষেত্রে দুই দেশ ‘চিরশত্রু’। সেটা ক্রিকেট হোক, ফুটবল হোক কিংবা রাগবি।
কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন যেটি এখন সোয়ালেক স্টেডিয়াম নামে পরিচিত, দুই দেশকে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত করেছে পরম মমতায় ও গর্বের বাঁধনে। তাসমান সাগরের এপার-ওপারের দলকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল হারিয়েছে সোয়ালেক স্টেডিয়ামে।
এক যুগ আগে ক্রিকেটের বর্তমান ও তৎকালিন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এক যুগ পর নিউজিল্যান্ডকে একই ময়দানে মাটিতে নামিয়ে আনল টাইগাররা। দুই দলের মধ্যে লড়াইয়ের আরও একটি মিল পাওয়া গেল ম্যাচের স্কোরবোর্ড দেখেও। ২০০৫ সালে হাবিবুল বাশারের দল অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল ৫ উইকেটে। আজ মাশরাফি বিন মুর্তজার দল নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে ৫ উইকেটে। এক অদ্ভুত মিল দুই গৌরব গাঁথা জয়ে।
অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশ দল ক্রিকেটে নিজেদের আগামণী বার্তা দিয়েছিল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আজকের জয় বাংলাদেশকে দিচ্ছে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অনুপ্রেরণা। শুক্রবার নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে এক পা দিয়ে রেখেছে। শনিবার ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে লড়াইয়ের উপর বাংলাদেশের ভাগ্য নির্ধারণ হবে। অস্ট্রেলিয়া হারলে বাংলাদেশ সেমিফাইনাল নিশ্চিত করবে।
ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের উত্তাপ এখন নেই। নেই অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড লড়াইয়ের ঐতিহাসিক আবেদনও। কিন্তু বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড প্রতিবার মুখোমুখি হওয়া মানেই যেন একেকটি যুদ্ধ। যেই যুদ্ধের আবেদন, উত্তেজনা, রোমাঞ্চ টের পাওয়া গেল কার্ডিফে ম্যাচের প্রতিটি মুহুর্তে।
ব্যাট হাতে উড়ন্ত সূচনা পাওয়া নিউজিল্যান্ড ইনিংসের শেষ দিকে আটকে যায় বাংলাদেশের দূর্দান্ত বোলিংয়ে। আবার নিউজিল্যান্ডের আগুণঝরা বোলিংয়ে শুরুতে বাংলাদেশের পরাজয়ের শঙ্কা! কালো মেঘ কাটিয়ে উদিত হয় নতুন সূর্য। সেই উত্তাপে জ্বলে উঠে বাংলাদেশ। নিজেদের শক্তি ও সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বকে আরেকবার অবাক করল। কার্ডিফে রচিত হলো রূপকথার আরেকটি মহাকাব্যের। ২৬৬ রান তাড়া করে ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর ৫ উইকেটে পাওয়া জয় সত্যিই মনোমুগ্ধকর, ঐতিহাসিক ও বীরত্বের। মাশরাফির দল অসম্ভব কাজটি সম্ভব করে দেখিয়েছে।
রূপকথার মহাকাব্যের এবারের রচয়িতা সাকিব আল হাসান। নায়ক সাকিবের সঙ্গে পার্শ্ব-নায়কের ভূমিকায় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ধ্বংসস্তুপ থেকে বাংলাদেশকে তুলে নিয়ে সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ লিখলেন লাল-সবুজের বিজয়গাঁথা। ২২৪ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে জয় এনে দেন দুই তারকা। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ রানের জুটি এবং আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি করেছেন দুজনই। সাকিব সপ্তম সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে করেছেন ১১৪। মাহমুদউল্লাহ ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে করেছেন ১০২ রান। ইশ! সাকিব জয়ের থেকে মাত্র ৯ রান দূরে থেকে আউট না হলে নিশ্চিত বিজয় মালা পরে মাঠ ছাড়তে পারতেন। তাতেও আপেক্ষ নেই সাকিবের। বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো বিশ্বমঞ্চে জেতাতে পেরেছেন তাতেই সন্তুষ্ট বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার।
২৬৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামতেই ৩৩ রানে ৪ উইকেট নেই বাংলাদেশের। দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল কোনো রান না করেই সাজঘরে ফিরেন। সাব্বির, সৌম্য হতাশা বাড়ান দ্রুত সময়ে। ১৪ রান করে মুশফিকুর রহিম প্রতিদ্বন্দ্বীতার ইঙ্গিত দিলেও টিকতে পারেননি অ্যাডাম মিলনের অসাধারণ এক বলে। এরপর ব্যাটিংয়ে আসেন মাহমুদউল্লাহ। ক্রিজে থাকা সাকিবকে নিয়ে কিউই বধের মহাকাব্য লিখা শুরু করেন সাইলেন্ট কিলার। এরপর বাকিটা ইতিহাস।