
নিজস্ব প্রতিবেদক : জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) পুরাতন ও নতুন ধারা মিলে পুনরায় সংগঠিত হয়ে দেশব্যাপি দাওয়াতি কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাব বলেছে, নতুনভাবে সংগঠিত হতে যাওয়া দুই ধারার জঙ্গিদের প্রধান বা আমীর হিসেবে থাকছেন আবু মুহারিফ নামের একজন। আর সমন্বয়ক হিসেবে নেতৃত্বে আসছেন সাজিদ নামের একজন; যিনি জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান বলে সন্দেহ র্যাব গোয়েন্দাদের।
রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।
এর আগে শনিবার গভীর রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী পশ্চিমের দাওয়াতি আমির ইমরান আহমেদ (৩৭) এবং তার সহযোগী শামীম মিয়াকে (২৭) আটক করে র্যাব। তাদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল সংখ্যক জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘জেএমবি পুনঃসংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য দিয়েছেন ইমরান আহমেদ। সম্প্রতি জেএমবির নতুন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা দেশের ১০টি জেলায় নতুনভাবে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নেয়। সর্বশেষ গত ১২ এপ্রিল বগুড়ার সোনাতলা এলাকার একটি বাসায় তাদের একটি দাওয়াতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে ১০ সদস্য বিশিষ্ট একটি দাওয়াতি বোর্ড গঠন করা হয়। রাজধানীর নন্দীপাড়ায় এক মসজিদের খতিব শায়েখ আরিফ জঙ্গিদের দাওয়াতি শাখার আমির হিসেবে নির্বাচিত হন।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে জেএমবির সমন্বয়ক হিসেবে সাজিদ ওরফে সানজিদ ওরফে লালভাই দায়িত্ব পালন করছেন। আতিয়া মহলে অভিযানের আগে তিনি সেখানে অবস্থান করছিলেন। অভিযানের আগে কোনভাবে ঢাকায় এসে মহাখালীতে ইমরানের বাসায় আশ্রয় নেন। পরে সাজিদ, ইমরান ও আরো বেশ কয়েকজন একত্রিত হয়ে অন্য কোথাও নাশকতার পরিকল্পনা করেন। বিভিন্ন সময়ে জেএমবির উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের অনেকেই ইমরানের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন।’
মুফতি মাহমুদ আরো বলেন, ‘আবু মুহারিফ মূলত পর্দার আড়ালে থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তার সাথে সমন্বয়কের যোগাযোগ রয়েছে। মূলত সমন্বয়কই সবার সাথে সমন্বয় করছেন। বিভিন্ন শাখা প্রধান ও আমিরের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছেন সমন্বয়ক সাজিদ। সাধারণত জঙ্গিদের সামরিক শাখার প্রধানরাই সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।’
ইমরান আহমেদের নিজের একটি টেক্সটাইল মিল রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইমরান আর্থিকভাবে সচ্ছল এবং জেএমবির অন্যতম অর্থ যোগানদাতা। ২০১২ সালে জঙ্গি নেতা জসীমউদ্দীন রাহমানীর সাথে পরিচয়ের পর তিনি জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন। পরবর্তী সময়ে শায়েখ আরিফের সাথে তার সখ্য গড়ে ওঠে। এরপর তিনি নতুন সদস্য সংগ্রহের দিকে ঝুঁকে পড়েন।
ইমরান ইতোমধ্যে ৩০-৪০টি দেশ ভ্রমণ করেছেন। তিনি তার বাসা, অফিস ও ফ্যাক্টরিতে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার বিভিন্ন বই এবং উপকরণ সংরক্ষণ করতেন। তিনি সংগঠনের অনেক সদস্যের পাসপোর্ট করে দিয়েছেন। ২০১৬ সালে গ্রেফতার হওয়া আব্দুল হাকিমের জামিনের জন্য তিনি ইতোমধ্যে দুই লাখ টাকা খরচ করেছেন। তিনি মূলত জেএমবি সদস্যদের অর্থ ও অস্ত্রের যোগানদাতা। নিহত ও কারাগারে অবস্থানরত সংগঠনের সদস্যদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করতেন তিনি।
নতুন নেতৃত্বের বিষয়ে মুফতি মাহমুদ বলেন, ‘যাদের নাম এসেছে এগুলো সাংগঠনিক নাম বলেই মনে হচ্ছে। তাদেরকে গ্রেপ্তার করা গেলেই সব বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এছাড়া, ইমরানকে রিমান্ডে এনে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরো তথ্য পাওয়া যাবে।’