
গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বানিয়ারচর ক্যাথলিক গির্জায় বোমা হামলার ১৬ তম বার্ষিকী আজ। ২০০১ সালের এই দিনে (৩ জুন) ভয়াবহ ওই বোমা হামলায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ১০ জন নিহত ও আরো অর্ধশত আহত হয়।
এ হত্যাকান্ডের ১৬ বছর পার হলেও বিচার কাজতো দূরে, আজ অবধি অভিযোগও গঠন করতে পারেনি সিআইডি। ফলে হতাশা আর ক্ষোভ নিহতদের পরিবারে। নিহতদের বাবা-মা ও স্বজনরা এখনো শুধু চোখের জল ফেলে যাচ্ছেন সন্তান হত্যার বিচারের আশায়।
এদিকে প্রতি বছরের ন্যায় দিবসটি পালন উপলক্ষে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় গির্জার পক্ষে থেকে আজ প্রার্থনা সভা, সমাধি জিয়ারত, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, পুষ্পমাল্য অর্পণ ও শোক র্যালিসহ বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নেওয়া হয়েছে।
বানিয়ারচরের সুখরঞ্জন হালদারের বয়স প্রায় ৭৬। স্ত্রী রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন বিছানায়। বোমা হামলায় মারা গেছেন এই দম্পাতর একমাত্র ছেলে সুমন হালদার। তারা আজো পাননি ছেলে হত্যার বিচার। তার মতই ছেলে হত্যার বিচার পাওয়ার আশায় দিন গুনছেন নিহত ঝিন্টু হালদারের বাবা জেমস পল মন্ডলসহ আরো নয়টি পরিবার। সেদিনের কথা মনে করে এখনো শিউরে ওঠেন নিহত পরিবারের সদস্যরা।
মামলার বিবরণ, প্রত্যক্ষদর্শী এবং নিহত পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য অনুযায়ী, ২০০১ সালের ৩ জুন সকাল ৭টার দিকে বানিয়ারচরের ওই ক্যাথলিক গির্জায় সাপ্তাহিক প্রাথর্না চলছিল। প্রার্থনা চলার কিছু সময় পর হঠাৎ বিকট শব্দে বোমা বিস্ফোরিত হয়। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা নরকে পরিনত হয়।গগনবিদারী চিৎকারে প্রার্থণারতরা দিক-বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। প্রাথর্নারত অবস্থায় ঘটনাস্থলেই ১০জন নিহত হয়। আহত হয় আরো অর্ধ শতাধিক।
নিহতরা হলো রক্সিড জেত্রা, বিনোদ দাস, মন্মথ সিকদার, সঞ্জীবন বাড়ৈ, পিটার সাহা, অমর বিশ্বাস, সতীশ বিশ্বাস, ঝিন্টু মন্ডল, মইকেল মল্লিক ও সুমন হালদার। তবে যে ১০জন নিহত হয়েছে এর মধ্যে ৭ জনই হলো মা বাবার একমাত্র সন্তান।
ঘটনায় মুকসুদপুর থানায় গির্জার তৎকালীন ফাদার পিতাঞ্জা মিম্মো বাদী হয়ে হত্যা ও পিটার বৈরাগী বাদী হয়ে বিস্ফোরক মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পরপরই হত্যাকারীদের ধরতে পুলিশ তৎপর হলেও কোন কুল-কিনারাই করতে পারেনি। পরে মামলা দুটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়।
এরপর দেশের অন্যান্য স্থানের বোমা হামলার আলামতের সাথে এ হামলার আলামত মিলে গেলে জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জেহাদ এ হামলা চালায় বলে এক প্রকার নিশ্চিত হয় সিআইডি। ফাদার পিতাঞ্জার মামলায় এ পর্যন্ত ১৮ ও পিটার বৈরাগীর মামলায় ১১জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সম্প্রতি এ দুটি মামলার প্রধান আসামি হরকাতুল জেহাদ নেতা মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
হত্যাকান্ডের দীর্ঘ ১৬ বছর হলেও বিচার কাজতো দূরে, অভিযোগ গঠন করাও সম্ভব হয়নি সিআইডির পক্ষে। এ পর্যন্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বদল হয়েছে ১৯ বার।
নিহত ঝিন্টু হালদারের বাবা জেমস্ পল মন্ডল বলেন, ‘ দেখতে দেখতে ১৬ বছর কেটে গেলেও সন্তান হত্যার বিচার পাইনি, আর এ জীবনে পাবো কিনা তাও জানিনা।’