
নিজস্ব প্রতিবেদক : মিথ্যাচার না করে আন্তর্জাতিকভাবে সন্ত্রাসী ও জালিয়াতি দলের যে তকমা লেগেছে সেখানে থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসা যায় সেই চেষ্টা করতে বিএনপি নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হাছান মাহমুদ।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ধানমিন্ডতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দল আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা অসীম কুমার উকিল, মৃণাল কান্তি দাস, সুজিত রায় নন্দী, ফরিদুর নাহার লাইলী, আব্দুস সবুর, দেলোয়ার হোসেন, শামসুন নাহার চাঁপা, হারুনুর রশীদ, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, আমিনুল ইসলাম আমিন, মারুফা আক্তার পপি, পারভীন জামান কল্পনা, রেমন্ড আরেং প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি হচ্ছে মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত। ক্রমাগতভাবে মিথ্যাচার করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অভিযুক্ত করাই হচ্ছে তাদের রাজনীতির মূল প্রতিপাদ্য। বিএনপির নেতারা কারণে-অকারণে দীর্ঘদিনের লালিত অভ্যাস থেকে সরকারকে দোষারোপ করে। আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করে। সাম্প্রতিক সময়ে তারা তাদের মিথ্যাচারের রেকর্ড নিজেরাই ভঙ্গ করেছেন।’
বিএনপি নেতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আয়নায় নিজের চেহারা দেখুন। আপনাদের নেত্রী খালেদা জিয়া কালো টাকা সাদা করেছেন। তারেক রহমান হাওয়া ভবন থেকে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। শুধু বিদ্যুৎ খাতে ২১ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছিল যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল।খালেদা জিয়া কালো টাকা সাদা করেছেন। হাওয়া ভবন থেকে ২ লাখ কোটি টাকা লুটপাট করেছিলেন। শুধু বেগম খালেদা জিয়াই কালো টাকা সাদা করেছেন তা নয়, বিএনপির তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রয়াত সাইফুর রহমানও কালো টাকা সাদা করেছেন। যে সরকারের অর্থমন্ত্রী কালো টাকা সাদা করেন, যে দলের চেয়ারপারসন কালো টাকা সাদা করেন, যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য কালো টাকা সাদা করেন, সেই দলের নেতারা যখন দুর্নীতির বিষয়ে কথা বলেন তখন মানুষের হাসি পায়।’
আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে না দিতে ওয়াশিংটনে গোপন তারবার্তা পাঠিয়েছিল ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর এই তারবার্তা পাঠানো হয়েছিল। বিশ্বের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট উইকিলিকস সেই গোপন তারবার্তাটি প্রকাশ করে।’
এ ছাড়া তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো সিমেন্স কোম্পানির কাছ থেকেও ঘুষ নিয়েছিলেন। সেটিরও তদন্ত যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে চলছে বলেও উল্লেখ করেন হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা মার্কিন কংগ্রেসম্যানের স্বাক্ষর জাল করে দলের পক্ষে বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় বিবৃতি পাঠিয়েছিল। সেটিরও জালিয়াতি ধরা পড়ে। সেই উপদেষ্টাকে কয়েক দিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত চার মাসের সাজা দেয়। তাই বিএনপি আন্তর্জাতিকভাবে একটি সন্ত্রাসী এবং জালিয়াতি সংগঠন হিসেবে বিশ্বে আজকে স্বীকৃতি পেয়েছে। আর কালো টাকার পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে হাওয়া ভবনের অন্যতম ঘনিষ্টজন রিজভী আহমেদ যখন দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেন তখন সেটি মিথ্যার প্রলাপ ছাড়া আর কিছু নয়।’
গতকাল প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহারের নিখোঁজের পর বিএনপি নেতা রিজভী আহমেদ সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের ওপর দোষারোপ করেন। এ বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এটি বালখিল্য ছাড়া কিছুই নয়। কোনো কিছু ঘটার পরপরেই সরকারকে অভিযুক্ত করার যে অভ্যাস সেটি ত্যাগ করুন। এটার তদন্ত হচ্ছে। ঘটনাটি নিশ্চয়ই রহস্যজনক। তদন্তকালীন আমরা কোনো কিছু বলতে চাই না। তদন্তের মাধ্যমেই আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘আপনাদের রাজনীতিই হচ্ছে মিথ্যাচার এবং সরকারকে অভিযুক্ত করার। এটা আপনাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আয়নায় নিজের চেহারা দেখুন। আপনাদের নেত্রী দুর্নীতির মামলায় হাজিরা দেন। আর আপনারা মিথ্যাচার করে বেড়ান। আপনাদের অনুরোধ জানাব, আপনাদের গায়ে আন্তর্জাতিকভাবে তকমা লেগেছে আপনারা একটি সন্ত্রাসী দল, জালিয়াতি দল। সেখানে থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসবেন, সেটার জন্য চেষ্টা চালান।’
সুইস ব্যাংকে অর্থপাচারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক বক্তব্য রেখেছেন। এই অর্থপাচারের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক সুইজারল্যান্ডের ব্যাংককে বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়েছে। সেটা আজকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তাদের (সুইস ব্যাংক) পক্ষ থেকে উত্তর দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক আবারো সুইজারল্যান্ডের ব্যাংককে চিঠি দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যারাই অর্থপাচার করেছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সে যেই হোক।’
গতকাল সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ব্যাপারে দলের প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওটা নিয়ে কথা বলব না। আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক বক্তব্য রেখেছেন। আইনমন্ত্রী বলেছেন। আামদের দলের আইনজীবী নেতারা কথা বলবেন।’