ভাষাসৈনিক আবদুল মতিনের দ্বিতীয় প্রয়াণ দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক : মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের অবিস্মরণীয় ও অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী হলেন আমাদের ভাষাসংগ্রামী আবদুল মতিন। ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা, আজীবন সংগ্রামী এই বীরের আজ দ্বিতীয় প্রয়াণ দিবস।

তিনি ২০১৪ সালের ৮ অক্টোবর সকাল ৯টায় ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।

বামপন্থি এই রাজনীতিক ১৯২৬ সালের ৩ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের চৌহালি উপজেলার ধুবালীয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আবদুল জলিল এবং মায়ের নাম আমেনা খাতুন। তিনি ছিলেন তাদের প্রথম সন্তান। জন্মের পর তার ডাকনাম ছিল গেদু।

ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখায় ২০০১ সালে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় এবং বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক লাভ করেন।

১৯৫২ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তোলা আবদুল মতিনের অন্যতম অবদান। সে বছর ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের ছাত্রসভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন তিনি। শিক্ষার্থীদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই কলাভবনের জনসভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ১৪৪ ধারা ভঙ্গের। তারই নেতৃত্বে একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সারা বাংলার জন্য আন্দোলনের নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।

ভাষা আন্দোলনের পর তিনি ছাত্র ইউনিয়ন গঠনে ভূমিকা রাখেন এবং পরে সংগঠনটির সভাপতি হন। এরপর কমিউনিস্ট আন্দোলনে সক্রিয় হন। ১৯৫৪ সালে পাবনা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক হন আবদুল মতিন। মওলানা ভাসানী ন্যাপ গঠন করলে তিনি ১৯৫৭ সালে তাতে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে তিনি পাবনা জেলাকে ভিত্তি করে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল)-এর ভেতরে আলাউদ্দিন আহমদকে নিয়ে একটি দল গড়ে তোলেন। পরে তিনি দেবেন শিকদার, আবুল বাশার, আলাউদ্দিন আহমদ ও নুরুল হক চৌধুরীর সহায়তায় পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করেন। টিপু বিশ্বাস, আলাউদ্দিন আহমদ ও তার নেতৃত্বে পাবনা জেলার জনগণ মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকা পালন করেন।

চীনকে অনুসরণকারী বামপন্থি দলগুলোর নানা বিভাজনের মধ্যেও আবদুল মতিন সক্রিয় ছিলেন রাজনীতিতে। ১৯৯২ সালে তিনি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ২০০৬ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। তিনি ভাসানী সাহিত্য-সাংস্কৃতিক পরিষদেরও প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন।

মৃত্যুর আগে দীর্ঘদিন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি মরণোত্তর চক্ষু ও দেহদান করেন।

দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে মহান এই ভাষাসৈনিককে আজ স্মরণ করবে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন।

সকাল সাড়ে ১০টায় নয়াপল্টনের যাদু মিয়া মিলনায়তনে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) উদ্যোগে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে এবং বিকেলে তোপখানাস্থ শিশু পরিষদ মিলনায়তনে ভাষা আন্দোলন স্মৃতি রক্ষা পরিষদের উদ্যোগে চিত্র প্রদর্শনী ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।