
এস.এম. নাহিদ : দুর্নীতি ও ভূমিদস্যুতায় জড়িত সাবেক ভূমি কর্মকর্তা সালামত উল্লাহ অবশেষে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়েছেন। খিলক্ষেতের পূর্ব নামাপাড়া এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত দুই দিন ধরে তাকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। বর্তমানে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করছেন তার দুই পুত্র।তাছাড়া বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকেও তার দেশত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।সালামত উল্লাহর বিরুদ্ধে ভূমি দখল, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সরকারি চাকুরীর আড়ালে গড়ে তুলেছেন এইসব অবৈধ সম্পদের সাম্রাজ্য।
সালামত উল্ল্যাহর যত সম্পদ :
সালামত উল্ল্যাহ তার স্ত্রী, সন্তান এমনকি ছেলের স্ত্রীর নামেও রেখেছেন বিঘা বিঘা জমি।৪ ছেলে সন্তানের জনক এই সালামত উল্ল্যাহর ইতিমধ্যে এক ছেলে মারা গিয়েছে।আইনের চোখ এড়াতে রূপগঞ্জের খুদেবাজারে সেই ছেলের শশুরবাড়ী এলাকায় ছেলের স্ত্রীর নামেও রেখেছেন ৯০বিঘা সম্পত্তি।এছাড়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানা এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর পাশে সালামত উল্ল্যাহর রয়েছে ২৫বিঘা জমি।পূর্বাচল উপশহরে রয়েছে একাধিক প্লট। গাজীপুরে বিশাল জায়গা নিয়ে রয়েছে বড়বড় গোডাউন।সেখান থেকে মোটা অংকের টাকা ভাড়া পান প্রতি মাসে।খিলক্ষেত নামাপাড়া এলাকায় ৭টি বহুতল ভবন সহ প্রায় ৭(সাত) বিঘা জমি রয়েছে সালামত উল্ল্যাহর।বর্তমান বাজারে যার আনুমানিক মুল্য প্রায় ৯০(নব্বই)কোটিরও বেশি।এছাড়া নামাপাড়ায় চ্যাম্পিয়ন ডেভেলপার কোম্পানির ব্যানারে নির্মাণাধীন ১০ তলা নবনির্মিত একটি ভবন রয়েছে ।অথচ জয়েন্ট ষ্টকের রেজিষ্ট্রেশন তালিকায় খিলক্ষেতের এই ‘চ্যাম্পিয়ন ডেভেলপার কোম্পানির নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সম্পদের পাশাপাশি সালামত উল্ল্যাহর স্ত্রী-সন্তানদের নামে-বেনামেও রয়েছে গোপন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। মতিঝিল রূপালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় বিল্ডিংয়ের উপরে তার ছেলের পরিচালনায় একটি সিকিউরিটি কোম্পানি রয়েছে।সালামত উল্লাহর সমস্ত কুকর্মের গোপন বৈঠক এবং আর্থিক লেনদেন এই অফিস থেকেই হয়ে থাকে বলে তথ্য রয়েছে।এমনকি সালামত উল্ল্যাহ ফ্যাসিষ্ট হাসিনার আশির্বাদপুষ্ট হওয়ায় এখান থেকে বিদেশেও টাকা পাচার করতে পারেন বলে অনেকের ধারনা।
স্থানীয়দের ক্ষোভ :
সালামত উল্লাহর দেশত্যাগের ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হোক।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়েছে, সালামত উল্লাহর বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং যথাসময়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সালামত উল্ল্যাহ কেবল একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা নন—তিনি ক্ষমতা, প্রতারণা ও প্রশাসনিক দুর্বলতার মিলিত প্রতীক। যদি এমন ব্যক্তিরা জবাবদিহির বাইরে থেকে যান, তাহলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।এমতাবস্থায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার এখনই উচিত—সালামত উল্ল্যাহ ও তার পরিবারের দেশ-বিদেশে সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করা, সকল ব্যাংক হিসাব জব্দ করা এবং আদালতের মাধ্যমে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগ নেওয়া।
সালামত উল্ল্যাহর মতো দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে, তা শুধু প্রশাসনিক দুর্বলতার প্রমাণ নয়—রাষ্ট্রের নৈতিক পতনের দিকেও বড় সতর্কবার্তা হয়ে থাকবে।তাই এখনই সময় কঠোর আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে এই দুর্নীতির চক্র ভেঙে দেওয়ার।