সংসদ প্রতিবেদক : অর্থপাচার হলে উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেও লাভ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।
ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘আমাদের কাছে হিসাব আছে, গত ১০ বছরে ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। আমাদের অর্থমন্ত্রী ওখানে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, প্রতিবছর যে অর্থ পাচার হচ্ছে, তা এক বছরের বাজেটের সমান। তাহলে এক বছরের বাজেট পাচার হয়ে যাবে আর এক বছরের বাজেট দিয়ে আমরা উন্নয়ন করব? এই পদ্ধতি দিয়ে উন্নয়নের সড়কে ওঠা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘যারা পাচার করছেন, তাদের কী পরিচয়? তাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক পরিচয় কী, সেটা আমাদের কাছে পরিষ্কার হতে হবে। যতদিন আমরা এটা না করতে পারব, অর্থপাচার বন্ধ না করতে পারব, উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেও আমাদের লাভ হবে না। পৃথিবীর অনেক দেশে এমন উদাহরণ আছে, যেখানে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পরও নিচের দিকে নেমে গেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের দেশে ৬০ শতাংশ টাকা কালো টাকায় পরিণত হয়েছে। এই টাকার কোনো ট্যাক্স দিতে হয় না। এই টাকা বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে রেখেছে। এগুলো খুঁজে বের করতে হবে।’
বিদ্যুৎ ও গ্যাসে ভ্যাট আরোপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ নির্দিষ্ট করেছেন। তবে নিত্যপণ্যের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের কথা বলেছেন তিনি। যদিও বিদ্যুৎ খাত ও এলপি গ্যাস খাত এই তালিকায় নেই। আমি যে শহর থেকে নির্বাচিত, সেখানকার পানের দোকানদারও একজন অর্থনীতিবিদ। পানের দোকানদারও বোঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ওপর ভ্যাট রেখে দিলে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে। শিল্প উৎপাদনের কী হবে, সেটা তারা বোঝে। সেটা যে আবার সাধারণ মানুষের ঘাড়েই পড়বে। সুতরাং সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। এটা বোঝা দরকার। তাই অর্থমন্ত্রীকে বলব, তিনি অর্থনীতিবিদ হতে পারেন, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ নিজের জায়গা থেকে সবাই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্থনীতিবিদ। সবাই তার বাস্তব অবস্থা বোঝে।’
লাখ টাকার বেশি ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক ৮০০ টাকা করার সমালোচনা করেন ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘আমি জানি না, পৃথিবীতে কোথাও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ওপর আবগারি ট্যাক্স আছে কি না। আবগারি ট্যাক্স এই দেশে এনেছিল ব্রিটিশরা। অন্যায় করলে যে কর দিতে হয়, সেটাকে বলা হয় আবগারি ট্যাক্স। যেমন, মদ-টদ এইগুলোর ওপর আবগারি আছে। একজন গরিব মানুষ যদি ১ লাখ টাকা সষ্ণয় করে, সেটা কী অপরাধ যে সেটার ওপর আবগারি ট্যাক্স দিতে হবে?’
তিনি বলেন, ‘এখন ১ লাখ টাকা ব্যাংকে রাখলে এক বছর পর একজন ১ লাখ পাঁচ হাজার টাকা পাবে। আর সাড়ে পাঁচ পার্সেন্ট যদি মুদ্রাস্ফীতি হয়, তাহলে আসল টাকা দাঁড়ায় ৯৯ হাজার ৫০০ টাকা। ব্যাংকের লোকরা সার্ভিস চার্জ কাটলে হয় ৯৯ হাজার টাকা। এরপর অর্থমন্ত্রী যদি ৮০০ টাকা নেন তাহলে ৯৮ হাজার ২০০ টাকা দাঁড়ায়।’
ব্যাংক হিসাবের ওপর থেকে আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার ছাড়াও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার দাবি জানান ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দলের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা।


