আইডিবি থেকে ৮০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত

নিউজ ডেস্ক : ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) কাছ থেকে গৃহায়ণ খাতে ১০ কোটি মার্কিন ডলার (৮০০ কোটি টাকা) ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।

জেদ্দা ভিত্তিক এই ব্যাংক ‘বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনকে (বিএইচবিএফসি)’ এই ঋণ দেবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৮০০ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ আইডিবির কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়টি গত সপ্তাহেই চূড়ান্ত করেছে। এখন অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, দেশের গৃহায়ণ খাতে সরকারি মালিকানাধীন বিএইচবিএফসিকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি শর্ত আরোপ করেছে আইডিবি। শর্তটি হচ্ছে-এই ঋণের বিপরীতে সরকারকে গ্যারান্টি দিতে হবে। এই গ্যারান্টির বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে করা হবে। অর্থমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া গেলে শিগগিরই আইডিবির সঙ্গে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।

ব্যাংকিং বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিএইচবিএফসির পক্ষ থেকে শহর ও গ্রামীণ এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য ‘রুরাল অ্যান্ড আরবান হাউজিং প্রজেক্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে আইডিবির পক্ষ থেকে মোট ১০ কোটি ছয় লাখ ৪৫ হাজার মার্কিন ডলার ঋণ পাওয়া যাবে।

বিএইচবিএফসি সূত্রে জানা গেছে, এই প্রকল্পটির মোট আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ কোটি ৫৬ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এর মধ্যে ১০ কোটি ছয় লাখ ৪৫ হাজার ডলার আইডিবির কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নেয়া হবে এবং বাকি দুই কোটি ৫০ লাখ ডলার বিএইচবিএফসির নিজস্ব তহবিল থেকে সঙ্কুলান করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শহর ও পল্লী এলাকায় আগামী পাঁচ বছরে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য গ্রাহকদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করা হবে।

ব্যাংকিং বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এডিবির ১০ কোটি ডলার ঋণ ১৫ বছরে পরিশোধ করতে হবে। তবে এর মধ্যে গ্রেস পিরিয়ড থাকবে পাঁচ বছর। এই গ্রেস পিরিয়ডের জন্য সুদ দিতে হবে।

বিএইচবিএফসি এই ঋণ গ্রাহকদের কাছে ১০ শতাংশ সুদে প্রদান করবে এবং তা পাঁচ বছরের মধ্যে গ্রাহককে পরিশোধ করতে হবে।

বিএইচবিএফসির এই ঋণ নেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে কিনা তা বিশ্লেষণ করে অর্থ বিভাগের ট্রেজারি বিভাগ প্রতিষ্ঠানটির ওপর একটি বিশ্লেষণ করেছে। এতে বলা হয়েছে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানটি কর্তৃক প্রদত্ত ঋণের স্থিতির পরিমাণ ছিল প্রায় দুই হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। যার মধ্যে শ্রেণি বিন্যাসিত ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ২০৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, যা প্রদত্ত ঋণের প্রায় ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির মূলধন ও সঞ্চিতির পরিমাণ ছিল প্রায় এক হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা।

এ হিসাবে প্রদত্ত ঋণের স্থিতি এবং মূলধন ও সঞ্চিতির অনুপাত প্রায় ১:১.৫৩। অন্যদিকে, একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির অন্যান্য দায়ের পরিমাণ ছিল ৮১৪ কোটি টাকা। তবে এ পর্যন্ত বিএইচবিএফসির দায়ের মধ্যে বৈদেশিক ঋণের কোনো দায় নেই।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে কর-পরবর্তী নিট মুনাফার পরিমাণ ছিল ৭৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ১১৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

এ সব তথ্য পর্যালোচনা করে অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে-বিএইচবিএফসির আর্থিক কর্মকৃতি মোটামুটি সন্তোষজনক।

উল্লেখ্য, যে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সময়ে সরকারি গ্যারান্টি নিয়ে এক হাজার ৮৭২ কোটি টাকার ডিবেঞ্চার ইস্যু করেছে। এ সব ডিবেঞ্চারের কিস্তি নিয়মিতভাবে পরিশোধ করে গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত তার স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৭২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।