‘এখন আমাদের শত্রু বাংলাদেশ’

বিনোদন ডেস্ক : টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা আবির চ্যাটার্জি। ব্যোমকেশ বক্সীর মতো গোয়েন্দা চরিত্র রূপায়ন করে অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি। সর্বশেষ বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসানের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন ‘বিসর্জন’ সিনেমায়। যা দর্শকদের প্রশংসা কুড়ানোর পাশাপাশি ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও লাভ করেছে।

অভিনেতা হলেও ক্রিকেট খেলা বেশ পছন্দ করেন আবির। তিনি নিজেও এক সময় ক্রিকেট প্র্যাকটিস করতেন। এদিকে চ্যাম্পিয়ন ট্রফির উত্তেজনায় ভাসছে ক্রিকেটপ্রেমীরা। আজ বিকেল সাড়ে ৩টায় মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-ভারত। এ উপলক্ষে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমে লিখেছেন আবির চ্যাটার্জি। তার এ লেখাটি রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

“বরাবরই আমি কলকাতার ছেলে। কথায় কথায় ‘টাচ উড’ বলাই স্বভাব। কিন্তু ‘বিসর্জন’ সিনেমার নাসির আলি (আমার চরিত্র) তো সেই শব্দ ব্যবহার করতে পারে না! নাসির নামাজ পড়ে। বাংলা বাক্যে ঢুকে যায় বহু উর্দু শব্দ। শুটিংয়ের ফাঁকে সেই সবকিছুই আমার শেখা জয়ার কাছ থেকে। জয়া আহ্সান। ‘বিসর্জন’ এর পদ্মা। আমি যেমন কোনো দিন নামাজ পড়িনি, জয়াও তেমন কোনো দিন সন্ধ্যা আরতি করেনি। শুটিংয়ে সন্ধ্যা আরতি আমি আর টিমের বাকি লোকেরা ওকে শেখাতাম। দু’দেশের মানুষের এই সম্পর্কটাই তো আসলে বলতে চেয়েছিল ‘বিসর্জন’! সে জন্যই তো এত পুরস্কার, এত আলোচনা!

ইদানিং মনে হয়, প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের জায়গাটাই গুলিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টা বড্ড বেশি চোখে পড়ে, যখন দুই দেশের ক্রিকেট ম্যাচ থাকে। যেমন হচ্ছে এখন। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইট দেখতেও খুব বিরক্তবোধ করছি। আমরা যখন ছোট ছিলাম, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে ঠিক এই কাণ্ডটাই হতো। তখন অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছিল না, এই যা বাঁচা। যত দিন গিয়েছে, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের সংখ্যা কমেছে নানা কারণে। যেটুকু হয়, সেটাও খুব একপেশে হয়ে গিয়েছে।

অন্যদিকে, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেট ক্রমশ শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে। হয় তো সে জন্যই আমাদেরও ফোকাস ঘুরে গিয়েছে। এখন আমাদের শত্রু বাংলাদেশ। বাকস্বাধীনতার নামে যে ইচ্ছে লিখছে ফেসবুকে-হোয়াটসঅ্যাপে। মনে করছেন, বাকস্বাধীনতার নামে বুঝি যা খুশি করা যায়! যখন তখন নিজের মতো আঘাত করা যায়।

একটু আধটু ক্রিকেট আমিও খেলেছি। ‘কিলার ইনস্টিংক্ট’ মাঠে শেখানো হতো। যে কারণে জেফ থমসন বলতে পারতেন, ব্যাটসম্যানের মুখে বল মারতে পারলে তার সবচেয়ে আনন্দ হয়। কিন্তু সেটা মাঠের ভেতরে। উইকেট কিপারের স্লেজিংও বাইশ গজে হয়। ওগুলো খেলার অঙ্গ। খেলার শেষে হ্যান্ডশেক করার পর স্লেজিং আর কেউ মনে রাখে না। সেখানেই স্পোর্টসম্যান স্পিরিট শব্দটার গুরুত্ব। ক্রিকেট একইসঙ্গে দুটো বিষয় শেখায়। প্রতিপক্ষকে সম্মান করা কিন্তু তাকে নিয়ে হীনমন্যতায় না ভোগা। যত দিন যাচ্ছে কেবলই মনে হচ্ছে, মাঠের ভেতরে এবং বাইরে স্পোর্টসম্যান স্পিরিটেরই যেন সবচেয়ে বেশি অভাব। আর সে কারণেই গালাগাল বাড়ছে। খেলা আর খেলা থাকছে না, যুদ্ধে পরিণত হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে সামাজিক, রাজনৈতিক যুদ্ধের প্রেক্ষাপট। এটাই সবচেয়ে দুঃখজনক।

উপমহাদেশে ক্রিকেট একটা ধর্ম। হতেই পারে। ক্রিকেট ঘিরে সত্যিই সেই উন্মাদনা আছে। কিন্তু যে কোনো ধর্মই অন্যের প্রতি সহনশীল হতে শেখায়। ক্রিকেট ধর্মেরও সেটা মনে রাখা দরকার। শচীন টেন্ডুলকারও তো তাই বলেছেন। তাকে নিয়ে তৈরি সিনেমাতে তিনি বলেছেন, ক্রিকেট তার জীবনের পঞ্চাশ শতাংশ। যা মাঠে থাকে। আর বাকি পঞ্চাশ শতাংশ পরিবার। সেটা বাড়িতে। দুটো গুলিয়ে ফেললে মুশকিল।

সর্বশেষে একটা কথা বলতে চাই- যত দিন যাচ্ছে, আমাদের জীবন থেকে ধৈর্য শব্দটা কার্যত হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা বড় সিনেমা দেখতে চাই না। লম্বা গান শুনতে চাই না। মোটা বই পড়তে চাই না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তারই প্রতিফলন। কোনো দেশের মানুষই অন্যদেশের মানুষের প্রতি ধৈর্য দেখাচ্ছেন না। গালাগাল করা খুব সহজ হয়ে গিয়েছে। বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। গালাগাল আমরা সবাই জানি। জানি না, কোথায় তার প্রয়োগ ঘটাতে হয়।”