
বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ছবিতে বহুবার এমন দৃশ্য দেখে থাকবেন যেখানে অনেক চেষ্টা-চরিত্র করে কোনও কম্পিউটারের পাসকোড ব্রেক করে হ্যাক করা হচ্ছে কম্পিউটার। হ্যাকিং ইদানীং খুব একটা বড় ব্যাপার নয়। এদেশে এখন প্রায় প্রতি পাড়ায় পাড়ায় একজন হ্যাকার রয়েছেন। এছাড়া এথিক্যাল হ্যাকিংয়ের ওয়র্কশপ, সার্টিফিকেট কোর্স বেড়ে যাওয়ায় যাঁরা কম্পিউটার ঘাঁটতে ভালবাসেন, সুযোগ পেলেই তাঁদের হ্যাকিংয়ের জন্য হাত সুড়সুড় করে। কিন্তু এখানে স্তরভেদ আছে। সব কম্পিউটার হ্যাক করা সকলের কম্মো নয়। কারণ যেসব কম্পিউটারে খুব গোপনীয় কোনও ডেটা থাকে, সেই সব কম্পিউটার চালু করার পাসকোডটি খুবই স্ট্রং হয়। সহজে ব্রেক করা যায় না।
কিন্তু যদি কম্পিউটার চালু না করে, বন্ধ অবস্থাতেই হ্যাক করে নেওয়া যায় তথ্য? একটু আজগুবি মনে হলেও, এমনটাই দাবি করছেন হ্যাকার স্যামি কামকার। সম্প্রতি অনলাইন ম্যাগাজিন ‘মাদারবোর্ড’-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে তিনি জানিয়েছেন যে এমন একটি ডিভাইস তিনি আবিষ্কার করেছেন, যে ডিভাইসটি কম্পিউটার বন্ধ থাকা অবস্থাতেই হ্যাক করে নিতে পারে সমস্ত তথ্য। এই ডিভাইসটির তিনি নাম দিয়েছেন ‘পয়জনট্যাপ’। কামকারের বক্তব্য, কম্পিউটারে উইনডোজ, ওএস এক্স, বা লিনাক্স, যে সিস্টেমই থাকুক না কেন ‘পয়জনট্যাপ’ সমস্ত এইচটিটিপি কুকিজ সাইফন করে নিতে সক্ষম।
ইন্টারনেটে লগ ইন করে একটি কম্পিউটারে যত উইনডো খোলা হয় সেগুলি সবই কুকি হিসেবে থেকে যায়। এই কুকি এবং ক্যাশে ডেটা মাঝেমধ্যেই ক্লিন করতে হয়, না হলে কম্পিউটারের র্যাম স্লো হয়ে যায়। যে কম্পিউটারে খুব বেশি কাজ হয়, সেগুলিতে সচরাচর সপ্তাহে একদিন বা পনেরো দিনে একদিন কুকি এবং ক্যাশে ডিলিট করা হয়। নাহলে বহু কম্পিউটারই মাসের পর মাস কুকি-ক্যাশে ডিলিট না করেই চলতে থাকে। হ্যাকাররা সেই অভ্যাসেরই সুযোগ নেয়। আর এই ডিভাইসটিও তৈরি করা হয়েছে সমস্ত ক্যাশে এবং কুকি সাইফন করে নেওয়ার জন্যেই।
কামকারের বক্তব্য, এই ডিভাইসটি পাসওয়র্ড-প্রোটেক্টেড বন্ধ কম্পিউটারের ইউএসবি অথবা থান্ডারবোল্ট পোর্টের মাধ্যমেই হ্যাকিংয়ের কাজটি সম্পন্ন করবে। এটি এমন একটি ওয়েব-বেসড ব্যাকডোর তৈরি করে এইচটিটিপি ক্যাশেতে যে ডিভাইসটি খুলে নিলেও সেই কম্পিউটারে তার অ্যাকসেস বজায় থাকে। অর্থাৎ এর পরে যখনই ইউজার কম্পিউটারটি চালু করে ইন্টারনেটে লগ ইন করবেন, ওই ডিভাইসটি তখনও ইউজারের অনলাইন অ্যাক্টিভিটি ট্রেস করতে পারবে।
এমন একটি তাক লাগানো ডিভাইসটির দাম রাখা হয়েছে মাত্র ৫ ডলার অর্থাৎ প্রায় ৩৫০ টাকা। কামকার তাঁর প্রতিবেদনে লিখেছেন যে এই ডিভাইসটি ব্যবহার করতে হ্যাকিং জানতে হবে না। এটি স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই এটি কিনে কোনও বন্ধ কম্পিউটারে লাগিয়ে জাস্ট এক মিনিট অপেক্ষা করে, তার পর খুলে নিয়ে চলে এলেই হবে। তবে কামকার যেমন হ্যাকিং ডিভাইস বানিয়েছেন, তেমনই এই ডিভাইসের মাধ্যমে হ্যাকিং আটকানোর জন্য টিপসও দিয়েছেন— কাজ হয়ে গেলে কম্পিউটারের প্রত্যেকটি ব্রাউজার বন্ধ করা, ইউএসবি অথবা থান্ডারবোল্ট পোর্টকে ডিসএবল করে রাখা, এনক্রিপ্টেড স্লিপ মোডে কম্পিউটারটি সুইচ করে রাখা ইত্যাদি অভ্যাসগুলি প্রতিদিন বজায় রাখলে এবং নিয়মতি কুকি ডিলিট করলেই কম্পিউটার অনেকটা সুরক্ষিত থাকবে।