
আজিজুল ইসলাম বারী,লালমনিরহাট : বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অফ ফার্টিলাইজার (বাফা) লালমনিরহাট সার গোডাউনে চীন থেকে আমদানীকৃত ১০ হাজার মেট্রিক টন নিম্নমানের ইউরিয়া সার ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।এতে সরকারের ক্ষতির পরিমান প্রায় ১৪ কোটি টাকা।সংশ্লিষ্ট সুত্র মতে, বোরো মৌসুমে কৃষকের সার সংকট দূর ও বেশি ফলনের জন্য সরকার প্রতি বছর ভুর্তকি দিয়ে সুদুর চীন থেকে ইউরিয়া সার আমদানী করেন। আর সেই আমদানীকৃত সার দেশের বিভিন্ন সরকারী বাফা’র গোডাউনে মজুদ রাখা হয়।বোরো মৌসুমে সেই সার নিয়োগপ্রাপ্ত বিসিআইসির ডিলারের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকের হাতে চলে যায়। কিন্তু ভুর্তকি দিয়ে চীন থেকে সার আমদানী করলেও গত কয়েক বছরের সার গুলো ছিলো অত্যন্ত নিম্নমানের ও জমাট বাধা। আর এই নিম্নমানের জমাট বাধা সার ডিলাররা নিতে রাজি না হওয়ায় গোডাউনে তা মজুদ রাখা হয়। এভাবে আমদানীকৃত নিম্নমানের সেই সার বছরের পর বছর মজুদ থাকায় জমাট বেধে শক্ত বরফে পরিনত হয়েছে ।এক সময় মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে সারের গুনগত মান নষ্ট হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এবছর নতুন সার এলে যায়গার সংকটে কয়েক বছরের মজুদ সেই ব্যবহার অনুপযোগী সারের বস্তা গোডাউনের বাহিরে স্তুপ করে ঢেকে রাখা হয়।বিসিআইসির সার ডিলাররা অভিযোগ করে জানান, লালমনিরহাটের মহেন্দ্রনগরের বাফা’র সার গোডাউনের ইনচার্জ আব্দুল হানিফ ২০০৯ সালে লালমনিরহাটে আসার পর থেকে জেলার প্রভাবশালী কয়েকজন সার ডিলারদের নিয়ে গড়ে তোলেন একটি সিন্ডিকেট। আর এই প্রভাবশালী সার ডিলার সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই চলতে থাকে বানিজ্য। প্রতি মৌসুমে নতুন সার আসলেই পড়ে সিন্ডিকেটের হাতে। আর সেই নতুন সারের সাথে অন্যান্য সাধারন ডিলারদের বাধ্য হয়ে নিতে হয় ব্যবহার অনুপযোগী জমাট বাধা সার। এসকল সিন্ডিকেটের হাতে অসহায় হয়ে পড়েন লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার ৫১জন সাধারন সার ডিলার।কিন্তু কৃষকরা এসব জমাট বাধা সার না কেনার কারনে ডিলাররা পড়েন মহাবিপাকে। এক পর্যায়ে সাধারন ডিলাররা নষ্ট সার না কেনার কথা গোডাউন ইনচার্জ হানিফকে জানিয়ে দেন। একারনে ইনচার্জ ও ডিলারদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হলে ফাঁস হয়ে যায় ব্যবহার অনুপযোগী সার ও সিন্ডিকেট বানিজ্যের বিষয়টি।সরেজমিনে বুধবার সকালে সরকারী ওই সার গোডাউনে গিয়ে দেখা যায়, সরকারের ভর্তুকি দিয়ে আমদানীকৃত ১০ হাজার মেট্রিকটন নিম্মমানের সারের বস্তা খোলা আকাশের নিচে গোডাউনের চতুর দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। কৃষকরা নিচ্ছে না এ নিম্নমানের সার। ফলে বিসিআইসি’র ডিলাররাও সার না নিয়েই ফিরে যাচ্ছেন। সূত্র জানায়, জেলায় বোরো মৌসুমে ৬ হাজার ৩১ মেট্রিকটন ইঊরিয়া সারের চাহিদা থাকলেও গোডাউনে রয়েছে ২৬ হাজার মেট্রিকটন সার। তার মধ্যে ১০ হাজার মেট্রিকটন শক্ত জমাট বাধা ও ব্যবহারের অনুপযোগী। যার মুল্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা।বিসিআইসি’র সার ডিলার সমিতির সাবেক সাধারন সম্পাদক আবু তাহের জানান, গোডাউন ইনচার্জকে ম্যানেজ করে সিডিকেটের মাধ্যমে নতুন সার গুলো বিতরন করায় পুরাতন সারগুলো মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।অপরদিকে, সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর গ্রামের বোরো চাষী পনির উদ্দিন, আদিতমারী উপজেলার ভাদাই গ্রামের কৃষক সুমন আলী ও একই গ্রামের বোরো চাষী রিফাত আলী জানান, জমাট বাধা ও পচন ধরায় এ নিম্নমানের ইউরিয়া সার ক্ষেতে দিলে লোকসান হতে পারে বলে এ নষ্ট চীনা সার জমিতে দেই না। অপরদিকে, বিসিআইসির সার ডিলার কাজী শাহাজাহান দাবী, জমাট বাধা সার পরিবর্তন করে ভালো সার না দিলে সার সংকট দেখা দিবে লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলায়।লালমনিরহাট মহেন্দ্রনগর বাফা’র গোডউন ইনচার্জ হানিফ মিয়া জানান, কয়েক হাজার মেট্রিকটন সার জমাট বেধে নষ্ট হয়ে গেছে।এসার উপর মহলের নির্দেশে গোডাউনে নেওয়া হয়েছিল। সার নষ্ট বিষয়ে বাফা’এর উদ্ধর্তন মহলে জানানো হয়েছে।লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিধু ভূষন রায় জানান, এ ধরনের ঘটনা ঘটলে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।