চীনের বিতর্কিত এক সন্তান নীতির অন্যতম প্রবক্তা ও দেশটির পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক প্রধান পেং পেইইউনের মৃত্যু ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শ্রদ্ধার চেয়ে ক্ষোভ ও সমালোচনাই বেশি চোখে পড়ছে। বেইজিংয়ে গত রোববার ৯৬তম জন্মদিনের ঠিক আগমুহূর্তে তার মৃত্যু হয়।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে পেং পেইইউনকে নারী ও শিশুবিষয়ক কর্মকাণ্ডে ‘একজন অসাধারণ নেতা’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত চীনের পরিবার পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তবে সরকারি বর্ণনার বিপরীতে চীনের জনপ্রিয় মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্ম ওয়েইবোতে অনেকেই এক সন্তান নীতির ভয়াবহ প্রভাবের কথা তুলে ধরে তীব্র সমালোচনা করেছেন। একজন লিখেছেন, ‘ভূমিষ্ঠ হতে না পারা শিশুরা ওপারে নগ্ন দেহে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।’
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকা এক সন্তান নীতি বাস্তবায়নে স্থানীয় কর্মকর্তারা বহু ক্ষেত্রে নারীদের জোরপূর্বক গর্ভপাত ও বন্ধ্যাকরণে বাধ্য করতেন— যা আজও বহু মানুষের ক্ষত হিসেবে রয়ে গেছে।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কায় বেইজিং এই নীতি চালু করেছিল। এর ফলে দীর্ঘ সময় বিশ্বের সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশ থাকার পর চীনের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নাটকীয়ভাবে কমে আসে।
তবে নীতিটির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে এখন ব্যাপক প্রশ্ন উঠছে। গত বছর টানা তৃতীয়বারের মতো চীনের জনসংখ্যা কমেছে। ওয়েইবোতে একজন ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘যদি এই নীতি অন্তত ১০ বছর আগে শেষ করা হতো, তাহলে চীনের জনসংখ্যা আজ এভাবে ধসে পড়ত না!’
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত বছর চীনের জনসংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩৯ কোটিতে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, আগামী বছরগুলোতে এই নিম্নগতি আরও ত্বরান্বিত হতে পারে।
জনসংখ্যা নীতিনির্ধারক হিসেবে পেং পেইইউন বিশেষভাবে গ্রামীণ এলাকাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। একসময় গ্রামাঞ্চলে বড় পরিবার গড়ার প্রবণতা ছিল বেশি, কারণ বৃদ্ধ বয়সে সন্তানদের ওপর নির্ভর করাই ছিল প্রধান ভরসা। পাশাপাশি বংশ রক্ষার তাগিদে ছেলেসন্তানের প্রতি ঝোঁক থাকায় মেয়েশিশুদের অবহেলা, এমনকি কন্যা ভ্রূণ হত্যার ঘটনাও ঘটেছে।
ওয়েইবোতে আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘ওই শিশুগুলো যদি জন্ম নিত, তাহলে আজ তাদের বয়স প্রায় ৪০ হতো—জীবনের সেরা সময়।’
২০১০-এর দশকে এসে পেং পেইইউন প্রকাশ্যে তার অবস্থান বদলান এবং এক সন্তান নীতি শিথিল করার পক্ষে মত দেন। বর্তমানে কমে যাওয়া জন্মহার বাড়াতে বেইজিং শিশু পরিচর্যায় ভর্তুকি, দীর্ঘ মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং করছাড়সহ নানা প্রণোদনা দিচ্ছে।
তবু জনসংখ্যা হ্রাস ও বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চীনের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী কমে গেলে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে—এমন আশঙ্কাই করছেন বিশেষজ্ঞরা।


