রংপুর ও লালমনিরহাটে উত্তাল

চেয়ারম্যানের হুমকিতে লাশ নদীতে; জানেন না বাবা

জেলা প্রতিবেদকঃ তিস্তা নদী থেকে উদ্ধার হওয়া পোশাকশ্রমিক মৌসুমি আক্তারের লাশ নিয়ে তোলপাড় চলছে রংপুর ও লালমনিরহাটে।

গত শনিবার মধ্যরাতে রংপুরের মর্ডান এলাকায় পণ্যবাহী একটি ট্রাক থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। ময়নাতদন্ত শেষে ওই দিনই তার (মৌসুমি) বাবা গোলাম মোস্তফার কাছে লাশটি হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু ঈদের আগের দিন রোববার (২৪ মে) বিকেলে মহিষখোচায় তিস্তা নদী থেকে সেই লাশ আবারও উদ্ধার করে লালমনিরহাটের আদিতমারী থানা পুলিশ।

মৌসুমীর বাবা পাটগ্রামের ফকিরপাড়া গুচ্ছগ্রামের গোলাম মোস্তফা পুলিশের কাছে বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের হুমকিতে মেয়ের লাশ গ্রামে নিয়ে যেতে না পেরে রংপুর মেডিকেল থেকে লাশটি যে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে ফিরছিলেন, সেই অ্যাম্বুলেন্সের চালককে লাশটি অন্য কোথাও দাফনের জন্য পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। পরে কীভাবে সেই লাশ নদীতে গেছে তা তিনি জানেন না।

পুলিশ ও পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, অসুস্থতার কারণে গত শনিবার সকালে ঢাকা থেকে একটি পণ্যবাহী ট্রাকে করে গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটের পাটগ্রামের উদ্দেশ্য রওনা দেন মৌসুমি। এ দিন মধ্যরাতে তাজহাট থানার ২০০ গজের মধ্যে মর্ডান মোড়ে একটি ট্রাক থেকে তার লাশ উদ্ধার করে তাজহাট থানা পুলিশ। পরে রংপুর মেডিকেলে ময়নাতদন্ত ও করোনার নমুনা সংগ্রহ শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ। ট্রাকটি আটক করলেও ট্রাকের চালক ও হেলপারকে ছেড়ে দেয়া হয়।

তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রোকনুজ্জামান দাবি করেন, ঢাকা থেকে আসার পথে গাজীপুরেই মৌসুমির মৃত্যু হয়। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে সন্দেহ করে ট্রাকের চালক থানায় খবর দেয়; তারা মর্ডান এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করেন।

এ ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মামুনুর রশীদ বলেছেন, ৯৯৯ থেকে খবর পেয়ে তারা লাশটি উদ্ধার করেছেন। কোন অভিযোগ না থাকায় মৃত মৌসুমির বাবা গোলাম মোস্তফার জিম্মায় ট্রাকের চালক ও হেলপারকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম জানান, রোববার বিকালে ২য় বার লাশ উদ্ধার করে তার বাবার কাছে হস্তান্তর করতে চাইলে তিনি মেয়ের লাশ নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় পুলিশের উদ্যোগে পাটগ্রাম কবরস্থানে দাফন করা হয়।

তিনি আরও জানান, লাশ গ্রামে নিতে চেয়ারম্যান বাধা দেয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। লাশ মৌসুমির বাবা নাকি অন্য কেউ নদীতে ফেলেছেন তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তাজহাট থানা পুলিশের তত্ত্বাবধানে মর্ডান মোড় থেকে লাশ উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেলে এবং ময়নাতদন্ত শেষে একই অ্যাম্বুলেন্সে করে পাটগ্রামে নিয়ে যাওয়ার তথ্য থাকলেও ওই চালককে এখনও খুঁজে পায়নি পুলিশ।

আদিতমারী থানার ওসি আরও জানান, রংপুর মেডিকেলে অনেক অ্যাম্বুলেন্স থাকায় অভিযুক্ত চালককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে লাশ দাফনে বাধা দেয়ার যে অভিযোগ করেছেন মৌসুমির বাবা গোলাম মোস্তফা, তা অস্বীকার করে পুরো ঘটনা পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়েছেন পাটগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাইদ নেওয়াজ নিশাদ।

তিনি বলেন, মৌসুমির মায়ের মাধ্যমে জানতে পেরে পাটগ্রাম থানার ওসির মাধ্যমে তাজহাট থানা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে তিনিই ময়নাতদন্ত করে লাশটি আনার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু রংপুর মেডিকেল থেকে লাশ গ্রহণের পর পাটগ্রাম থানার ওসিসহ তিনি গোলাম মোস্তফার সঙ্গে চেষ্টা করেও আর যোগাযোগ করতে পারেননি বলে দাবি করেন।

মৌসুমীর বাবা গোলাম মোস্তফা অভিযোগ করছেন, চেয়ারম্যানের হুমকির কারণে তিনি মেয়ের লাশ গ্রামে আনতে না পেরে বাধ্য হয়ে অ্যাম্বুলেন্সের চালককে মেয়ের লাশ অন্য কোথাও দাফনের জন্য দেন। এজন্য ওই চালককে পাঁচহাজার টাকাও দিয়েছিলেন বলে জানান গোলাম মোস্তফা।

তাকে উদ্ধৃত করে ‘মেয়ের লাশ দাফন করতে না পেরে নদীতে ভাসিয়ে দিলেন বাবা” শিরোনামে কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে রংপুর ও লালমনিরহাটে।চেয়ার