ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এবং দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘন

তবে কি সংকটে ইভ্যালি?

এবার বানিজ্য মন্ত্রনালয় থেকে চিঠি পেয়েছে আলোচিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালি। আর এই চিঠিতে পরিষ্কারভাবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ও জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা সঠিকভাবে মেনে ব্যবসা পরিচালনা করার নির্দেশনা দিয়েছে বানিজ্য মন্ত্রনালয়।

মন্ত্রণালয়ের সহকারী পরিচালক-১ এস এম নাজিয়া সুলতানা স্বাক্ষরিত চিঠি ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাসেলের কাছে পৌছেছে গত ৪ মার্চ। তবে কি এবার ব্যবসা নিয়ে সংকটের মুখে ইভ্যালি? এই প্রশ্ন এখন ভোক্তাদের মুখে।

২০১৮ সালের ১৪ মে যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধিকের কার্যালয় (আরজেএসসি) থেকে নিবন্ধন নিয়ে একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ইভ্যালি। মাত্র ৫০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই কোম্পানির বর্তমান পরিশোধিত মূলধন ১ কোটি টাকা। ইভ্যালির নিবন্ধিত গ্রাহক ৩৭ লাখেরও বেশি এবং মাসিক লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটির নামে উঠে এসেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এবং দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘনের তথ্য। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। যেখানে বিদ্যমান দু’টি আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো লঙ্ঘনের দায়ে তিন বছর পর্যন্ত করাদণ্ডাদেশের বিধান রয়েছে।

অন্যদিকে, ইভ্যালি প্রতিমাসে কি পরিমাণ পণ্যের অর্ডার সংগ্রহ করছে এবং কি পরিমাণ পণ্য ডেলিভারি দিচ্ছে, তা মনিটরিং করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা, ২০২১ প্রনয়নের পর একদিকে ইভ্যালির ব্যবসা গুটিয়ে নেবার কিংবা ধস নামার যে গুঞ্জন উঠে এসেছে, তা যেন আরো গাঢ়ো করে দিলো বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের এই চিঠি।

শুরুর দিকে ভাউচার নামক একটি পদ্ধতি চালু করে ইভ্যালি। এ পদ্ধতির আওতায় বিভিন্ন পণ্যে ২০০-৩০০% পর্যন্ত ক্যাশব্যাক করতো। বর্তমানে ১০০-১৫০ পর্যন্ত এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৪০% পর্যন্ত ক্যাশব্যাক সুবিধা দিয়ে থাকে। ক্যাশব্যাকসহ বিভিন্ন লোভনীয় অফারে আকৃষ্ট হয়ে ক্রেতারা ইভ্যালির দিকে ঝুঁকছে।

তবে এবার, অগ্রিম মূল্য নেওয়ার পর সময়মত পণ্য ডেলিভারি না দেওয়ার অভিযোগের তথ্য প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। সেখানে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, এই অভিযোগ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৪৫ ও ৫৩ ধারা লঙ্ঘনের সামিল।

গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়ে ইভ্যালির বিরুদ্ধে আর্থিক ব্যবস্থাপনার ত্রুটি খতিয়ে দেখতে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ইভ্যালির বিরুদ্ধে পাওয়া বিভিন্ন অভিযোগ সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগ দ্বারা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগেও চিঠি পাঠানো হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডাব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক ও কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান মো. হাফিজুর রহমান জানান, ২১ মার্চ কনসালটেশন মিটিংয়ের পর আগামী মাসের মধ্যেই ‘ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা, ২০২১’ জারি হবে। ইভ্যালিসহ ই-কমার্সখাতের সকল কোম্পানিকে ওই নির্দেশনা মেনে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে।

নির্দেশিকার খসড়ায় বলা হয়েছে, অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করা পণ্য একই শহরের মধ্যে হলে সর্বোচ্চ পাঁচ দিনের মধ্যে এবং ভিন্ন শহর বা গ্রামে হলে ১০ দিনের মধ্যে ডেলিভারি করতে হবে। আর ক্যাশ অন ডেলিভারি ও আংশিক ক্যাশ অন ডেলিভারির ক্ষেত্রে একই শহরে সর্বোচ্চ সাত দিন এবং ভিন্ন শহর বা গ্রামে হলে সর্বোচ্চ ১৫ দিনের মধ্যে তা সরবরাহ করতে হবে।

এই সময়ের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি না পেলে ক্রেতা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে, এক্ষেত্রে কোম্পানিকে পণ্যমূল্যের দ্বিগুণ অর্থ জরিমানা দিতে হবে।