
নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীর স্ত্রী রিজিয়া নদভীর মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদপ্রাপ্তি ও তার সঙ্গে গ্রুপ ছবির বিষয়ে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
রোববার দুপুরে রাজধানীর ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকম-লীর সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
রিজিয়া নদভী হচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতা মুমিনুল হক চৌধুরীর মেয়ে। মুমিনুল হক হলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য। তিনি বিভিন্ন সময়ে সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে জামায়াতের প্রার্থী হয়েছেন।
রিজিয়া নদভী সম্প্রতি মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সদস্য মনোনীত হন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, দলের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে আমার জানা নেই। সামাজিকভাবে এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করার সুযোগ আছে কারণ, এখানে প্রশ্ন হল যিনি আওয়ামী লীগের এমপি, তিনি আজ প্রায় চার বছর ধরে আওয়ামী লীগের এমপি। এই চার বছর কিন্তু তাকে নিয়ে কোন কথা হয়নি। তার স্ত্রী যদি জামায়াত নেতার সন্তান হন তাহলে চার বছর ধরে তো এই সন্তানের স্বামী (হাজবেন্ড) হচ্ছেন এমপি। এই এমপিকে নিয়ে এতদিন কেউ কোন কথা বলেনি এবং তার (রিজিয়া) বিষয়ে কেউ কোন বিতর্ক সৃষ্টি করেনি।
এখন সে ( রিজিয়া) প্রশ্ন করছে, তাহলে কি আমার সন্তানের আওয়ামী লীগ করার অধিকার থাকবে না? তার হাজবেন্ডের সাথে সে আওয়ামী লীগ করতে পারবে না? তার বাবার সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। এই অবস্থাকে আপনি কি বলবেন?
ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, ‘তিনি (রিজিয়া) যার স্ত্রী তিনি তো আমাদের এমপি। এখন এমপি সাহেব এসেছেন আমার সাথে দেখা করতে। আমি তার স্ত্রীকে বাদ দিয়ে তার সাথে ছবি তুলব! বলব, আপনি সরে যান। তিনি কি জামায়াত দলের কোন সদস্য!
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জেলা কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, এটা মিথ্যা কথা। এই ধরনের কোন বিষয় আমার জানা নেই। এ সময় পাশে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা একেএম এনামুল হক শামীমও বলেন, এটা ঠিক না।
এরপর ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের প্রতি এই খবরগুলো সত্যাসত্য বিচার করে প্রকাশ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সে (রিজিয়া) জামায়াতের কোন কর্মী না। সে আওয়ামী লীগের কাজ করছে।’
রিজিয়া ছিল জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রী সংগঠন ছাত্রী সংস্থার সদস্য- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দিস ইজ নট ফ্যাক্ট। সে তো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে নাই। সে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল না।’
সাংবাদিকদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে কাদের বলেন, ‘আপনি আমাকে প্রমাণ দিন, সারা দেশে আওয়ামী লীগের নতুন সদস্য সংগ্রহের পর জামায়াত-শিবির কোথায় কোথায় আমাদের মেব্বার হয়েছে প্রমাণ দিন। আমরা ব্যবস্থা নেব।’
এ ব্যাপারে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘একেক সময় এক একটা চলবে আর কি? শুরু হয়েছে ওই হেফাজত নিয়ে। হেফাজতের ঝড় এখন নেই। এখন আপনারা আবার শুরু করেছেন একজন এমপির স্ত্রীকে নিয়ে। এটার পর আবার আরেকটা শুরু হবে। এগুলোর বাস্তবতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটার দায়িত্ব কি আমার বলার? এটা ইলেকশন কমিশন বলবে। আলোচনা করছে ইসি। আমি কি ইলেকশন কমিশনের মুখপাত্র নাকি? আমি এই কথা বলার মালিক না। এই কথা বলার মালিক হচ্ছে ইসি।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সিনিয়র ডিরেক্টর লিসা কার্টিসের ঢাকা সফর স্থগিত প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা ওনার ব্যাপার। এটা আমেরিকার অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। প্রসঙ্গত, রোববার এক দিনের সফরে লিসা কার্টিসের ঢাকায় আসার কথা ছিল।
পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রী পদে রদবদল প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলায়। আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কথা বলে। এটা একেবারে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। সেই অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে আমরা হস্তক্ষেপ করতে চাই না। আমরা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলাতে চাই না।
সংবাদ সম্মেলনের আগে ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সম্পাদকম-লীর সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, একেএম এনামুল হক শামীম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুস সবুর, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষা সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডাঃ রোকেয়া সুলতানা, ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশীদ, উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যদের মধ্যে এস এম কামাল হোসেন, আনোয়ার হোসেন, পারভীন জামান কল্পনা, মেরিনা জামান কবিতা সভায় উপস্থিত ছিলেন।