
এস.এম.মনির হোসেন জীবন– টঙ্গী বিশ^ইজতেমা ময়দান থেকে : পবিত্র হজে¦র পর সারা বিশ^ মুসলিম জাহানের ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমা রাজধানীর সন্নিকটে গাজীপুরের টঙ্গী তুৃরাগ নদী (কহরদরিয়া) নদীর তীরে সুবিশাল চটের তৈরী প্যান্ডেলের নিচে আগামীকাল শুক্রবার বাদ ফজরের নামাজের পর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে অআনুষ্ঠানিক ভাবে প্রথমপর্ব ৩ দিন ব্যাপী বিশ^ইজতেমা শুরু হচেছ। ১৪ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথমপর্ব শেষ হবে। চার দিন পর ১৯ জানুয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয়পর্ব। একইভাবে ২১ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দ্বিতীয়পর্ব। দুই পর্বে সারা মুসলিম জাতির সুখ, শান্তি, কল্যাণ, অগ্রগতি, ভ্রাতিত্ববোধ কামনা করে আখেরী মোনাজাত করা হবে। দেশ-বিদেশের প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ লোকের সমাগম ঘটবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিশ^ ইজতেমা আয়োজক কমিটি।
বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বি মো: গিয়াস উদ্দিন আজ জানান, গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে এবারের বিশ্ব ইজতেমার দুই ধাপে অংশ নেবেন দেশের ৩২ জেলার মুসল্লি। তবে প্রথম ধাপে অংশ নিচ্ছেন বিদেশি মুসল্লিসহ দেশের ১৬ জেলার মুসল্লি। ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেছেন।
তিনি আরো জানান,তারা প্রয়োজনীয় মালপত্র সঙ্গে নিয়ে যার যার খিত্তা ও কামরায় অবস্থান নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে প্যান্ডেল, ম , মুসল্লিদের পারাপারে তুরাগ নদের উপর ভাসমান সেতু, টয়লেট, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। টুকিটাকি কাজ এখনও পর্যন্ত মাঠে চলছে ।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান আজ জানান, বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র্যাব, আনসার ও ভিডিপি পৃথক ৫টি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি মুসল্লিদের অভিনন্দন ও স্বাগত জানাতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বিশ্ব ইজতেমা মাঠের প্রবেশ পথে ১৩টি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের ওযু, পয়ঃনিষ্কাষণ ও সুপেয় পানি সরবরাহের লক্ষ্য ইজতেমা মাঠে স্থাপিত ১৩টি গভীর নলকূপ দ্বারা ১৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটিার পাইপ লাইনের মাধ্যেমে প্রতিদিন ৩ কোটি ৫৪ লাখ গ্যালন সুপেয় পানি সরববরাহ নিশ্চিত করা হবে।ইজতেমা চলাকালীন ২১টি গার্বেজ ট্রাকের মাধ্যমে দিন-রাত বর্জ্য অপসারণ করা হবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্স) মেজর এ.কে.এম শাকিল নেওয়াজ আজ জানান, বিশ্ব ইজতেমায় আগত ধর্ম প্রান লাখে ালাখো মুসল্লিদের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা, উদ্বার, রোগী পরিবহন (এ্যাম্বুলেন্স),তুরাগ নদীতে দমকল বাহিনীর ডুবুরি টহল সহবিভিন্নদিক নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে তিনি নির্দেশ প্রদান করেন ।
তিনি আরো বলেন, ইজতেমায় আগমনরত বিদেশী অতিথিদের নিবাসে অতিরিক্ত বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। যাতে করে বিদেশী মুসল্লিদের কোন ধরনের অসুবিধা না হয় সে দিকে বিশেষ নজর রাখা হবে। ইজতেমার মুসল্লিদের জন্য ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
ইজতেমা মাঠে ভিড় জমাচ্ছেন দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা : টঙ্গীর তুরাগ তীরের ইজতেমা ময়দানে এরই মধ্যে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা। ধর্মপ্রান মুল্লিদের ¯্রােত এখন সোনাবানের টঙ্গী মুখি। দলে দলে মুসল্লিরা প্রয়োজনীয় মালপত্র সঙ্গে নিয়ে ময়দানে এসে যার যার খিত্তা ও কামরায় অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। বুধবার দিবাগত রাত থেকে এসকল দেশী বিদেশী ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এসে জড়ো হচেছন।
বিশ^ ইজতেমায় পুলিশ ও র্যাবের ৮ স্তরের নিরাপত্তা বলয় : বিশ^ ইজতেমায় আগত লাখো লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তায় জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৮ স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলা হবে বলে জানিয়েছে আইন শৃংখলা বাহিনী । দেশী-বিদেশী মুসল্লিদের জন্য থাকবে ৮ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা । মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের ৭ হাজার সদস্য ও র্যাবের ২৫০জন সদস্য মাঠে থাকবে। এ বছর বিশ^ ইজতেমায় গতবারের চেয়ে প্রায় দেড় হাজার পুলিশ সদস্য ও ৫টি ওয়াচ টাওয়ার বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়া ৪১টি সিসি ক্যামেরা ইজতেমা মাঠের চারপাশে স্থাপন করা হয়েছে। ময়দানের প্রতিটি খিত্তায় ৬ জন করে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এর মধ্যে পোশাকে, সাদা পোশাকে, ওয়ার্চ টাওয়ারের মাধ্যমে, সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে, চেকপোস্টের মাধ্যমে, মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে, নৌ টহল ও ভিডিও ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিং করা হবে। পুলিশের পক্ষে থেকে ১৫টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রথম পর্বে ১৬ জেলার মুসল্লিরা অংশ গ্রহন করবেন : বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে প্রথম ধাপে অংশগ্রহণ করবেন ১৬ জেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা । জেলা গুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকার একাংশসহ নারায়ণগঞ্জ, শেরপুর, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, গাইবান্ধা, লক্ষীপুর, সিলেট,চট্টগ্রাম, নড়াইল, মাদারীপুর, ভোলা, মাগুরা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠিী, প গড়, নেত্রকোনা, নরসিংদী এবং বগুড়া থেকে আগতরা। প্রতিটি জেলার জন্য নির্ধারিত স্থান ঠিক করা হয়েছে। প্রত্যেকেই স্ব স্ব খিত্তায় অবস্থান নেবেন। যদিও শুক্রবার থেকে ইজতেমা শুরু হবে। তবে তাবলিগ জামাতের নিয়মানুযায়ী বৃহস্পতিবার ফজরের পর থেকেই আম বয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হবে। এ বছর ১৬০ একর এলাকা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে বিশাল চটের প্যান্ডেল।
বিদেশি মেহমানদের জন্য ৪ কামরা বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক নিবাস : এবারের বিশ^ ইজতেমায় বিদেশি মেহমানদের জন্য তৈরি করা হয়েছে ৪ কামরা বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক নিবাস। ইজতেমা মাঠের উত্তর পশ্চিম কোণে উচুঁ জায়গায় তৈরী করা হয়েছে বিদেশী অতিথিদের নিবাসকেন্দ্র। ইতোমধ্যে ইজতিমা মাঠের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, বিদ্যুত, গ্যাস ও পানি সংযোগ পরীক্ষা করা হয়েছে।
ইজতেমা মাঠে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক নজরদারীতে : টঙ্গী বিশ^ইজতেমা উপলক্ষে গত সোমবার থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক নজরদারীতে রয়েছেন। আর ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপ পর্যন্ত ১২ হাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য অব্যাহত সেবা প্রদান করবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ৫টি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে আগতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার নিরাপত্তা বেষ্টনি আরও বেশি সতর্ক করে গড়ে তুলা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সার্বক্ষণিক নজরদারিও রাখা হবে। এ কারণে ইজতেমা অনুষ্ঠিত এলাকায় ৮স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলা হয়েছে। যাতে করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও রোহিঙ্গা প্রবেশ রোধ করা যায়।
বিশ^ইজতেমা ময়দানের রয়েছে ১৭টি প্রবেশ পথ : এবার বিশ^ইজতেমা ময়দানের রয়েছে ১৭টি প্রবেশ পথ। যার প্রতিটিতে থাকবে দেহ তল্লাশির কঠোর ব্যবস্থা। ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দানের চারদিকে ১৫টি সু-উচ্চ ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে। মাঠ জুড়ে থাকবে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের কড়া নজরদারি।
মুসল্লিদের জন্য ১৪টি গভীর নলকূপের : ইজতেমায় আগত ধর্মপ্রাণ লাখো লাখো মুসল্লিদের সুবিধার্তে এবার ১৪টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি সরবরা করা হবে। ১৩ কিলোমিটার পানির লাইন স্থাপনের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক অজু, গোসল এবং টয়লেটের নিরাপদ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। থাকবে পরিবেশ উন্নয়ন ও মশার উপদ্রব নিধনের কার্যক্রম।
বিশ^ইজতেমা মাঠে র্যাবের নিরাপত্তা ব্যবস্থা : টঙ্গী তুরাগ পাড়ের ৫৩তম বিশ^ ইজতেমায় লাখো লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য র্যাবের পক্ষ থেকে ২৫০জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবে সর্বদা নিয়োজিত থাকবে। র্যাবের পক্ষ থেকে ৯টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া মাঠের ভেতরে ও বাহিরে পোশাকে, সাদা পোশাকে ২৫০জন র্যাব সদস্য কাজ করবেন। সেই সাথে ওয়ার্চ টাওয়ারের মাধ্যমে, সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে, চেকপোস্টের মাধ্যমে, মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে, নৌ টহল ও ভিডিও ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক ইজতেমা মাঠের চারপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিং করা হবে।
সেনাবাহিনীর ৭টি ভাসমান পল্টুন ব্রিজ নির্মাণ : ইজতেমা মাঠে সহজে আগতদের যাতায়াত অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরাপদ করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৭টি ভাসমান পল্টুন ব্রিজ তৈরি করেছেন। এগুলোও বুধবার বিকেল থেকে মুসল্লিদের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের দক্ষ কর্মীদের ৩টি আধুনিক ইউনিট সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা থাকবে। প্রস্তুত থাকবে ১২টি গাড়ি ও ৯০টি অগ্নিনির্বপক যন্ত্র।
বিশ^ ইজতেমায় ফ্রি-৫০টি মেডিক্যাল টিম : বিশ^ ইজতেমায় আগতদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ৫০টি মেডিকেল টিম ফ্রি চিকিৎসা সেবা প্রদান করবেন। প্রস্তুত থাকবে ১৪টি অ্যাম্বুল্যান্স। অন্যান্য বছরের তুলনায় টঙ্গী সরকারী হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়েছে। হৃদরোগ, ডায়রিয়া ও অ্যাজমাসহ জটিল রোগীদের জন্য গঠন করা হয়েছে বিশেষ মেডিকেল টিম।