
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা সালন্দর ইক্ষু খামারের এক নারী শ্রমিককে বেদম মারধর করে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ওই খামারের দুই শ্রমিকসহ চারজনের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত শ্রমিক সুমন সালন্দর সিংপাড়া এলাকার মালেকের ছেলে ও মানিক ওই এলাকার আব্দুস সামাদের ছেলে। বাকি দুজন ওই নারীর অপরিচিত।
স্থানীয় লোকজন ওই নারী শ্রমিককে ইক্ষু খামার থেকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক রুকুনুজ্জামান জানান, অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে ওই নারীকে ভর্তি করা হয়েছে। ওই নারীর শরীরে একাধিক আঘাতে দাগ রয়েছে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন কিছুই বলা যাচ্ছে না। কিন্তু রোগীর জামা কাপড় ছেঁড়া দেখে মনে হয় হামলাকারীরা চেষ্টা করেছিল।
ওই নারী শ্রমিকের স্বামী বলেন, রাত ১১টায় বাড়িতে আমার স্ত্রী সন্তান ঘুমাচ্ছিল। হঠাৎ ঘরের দরজা ধাক্কা দেওয়ার শব্দ পেয়ে তার স্ত্রী উঠে দরজা খোলেন। এ সময় ৩/৪ জন তার মুখে চেপে ধরে তুলে নিয়ে যায় পাশের এক ইক্ষু খামারে। পরে স্থানীয় লোক অজ্ঞান অবস্থায় খামার থেকে হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করায়।
জ্ঞান ফিরে ওই নারী শ্রমিক বলেন, ‘আমার স্বামী কাজ শেষে প্রতি দিন রাতে বাড়ি ফিরে। হঠাৎ দরজা ধাক্কালে আমি বের হলে সুমন, মানিকসহ আরো দুজন আমার মুখ চেপে তুলে নিয়ে যায় পাশের একটি ইক্ষু খামারে। এ সময় সুমন, মানিকসহ তারা আমাকে প্রচণ্ড মারধর করে এবং ধর্ষণের চেষ্টা করে। পরে আমার চিৎকারে সুমনসহ বাকিরা পালিয়ে যায়। এ সময় তাদের নির্যাতনে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। স্থানীয় লোকজন আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘দুদিন আগে সালন্দর ইক্ষু খামারে কাজের সময় সুমনের সঙ্গে ঝগড়া বাধে। এ সময় সুমন ও তার লোকজন আমার শ্বাশুড়িকে মারধর করে। আর আমাকে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। পরে আমার শ্বাশুড়িকে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্থানীয় চেয়ারম্যানকে সুমনের বিষয়ে নালিশ করলে তিনি আইনি আশ্রয়ের কথা জানান। পরে আদালতের মাধ্যমে সুমনকে নোটিশ পাঠানো হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে শ্বাশুড়িকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আজ (শুক্রবার) রাতে সুমন ও তার লোকজন আমাকে তুলে নিয়ে মারধর করে ও ধর্ষণের চেষ্টা করেছে।’
সালন্দর ইউপি সদস্য ইব্রাহিম জানান, শুনেছি ইক্ষু খামারে ওই নারী ও সুমন একসঙ্গে কাজ করতেন। দুদিন আগে কথাকাটির জেরে বিরোধ সৃষ্টি হয়। আজ তাকে সুমনসহ কয়েকজন তুলে নিয়ে গিয়ে পাশবিক নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছে। লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
সদর উপজেলা সালন্দর ইউপি চেয়ারম্যান মাহাবুর হোসেন মুকুল বলেন, সুমনের বিষয়ে ওই নারী অভিযোগ করলে আমি আইনি আশ্রয়ের পরামর্শ দেই। ওই নারীকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ পেয়েছি।
নির্যাতিতার স্বামী ওসমান জানান, আমার স্ত্রীকে নির্যাতন ও ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় সুমন, মানিকসহ দোষীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
ঠাকুরগাঁও থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মশিউর রহমান জানান, নারী শ্রমিককে নির্যাতনের অভিযোগ থানায় এখন পর্যন্ত কেউ করেনি। অভিযোগ পেলেই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।