পৃথিবীতে এমন মানুষও রয়েছেন যাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে প্রতিনিয়ত আঘাত করে যাচ্ছেন

হাত পা রয়েছে, দিব্বি আছেন। ঘুরে-ফিরে, হেঁটে-চলে বেড়াচ্ছেন। যেমনটা চাইছেন করতে, ঠিক তেমনটাই করছেন। আবার বাসে উঠলে প্রতিবন্ধী দেখে সিটটাও ছেড়ে দিচ্ছেন। রাস্তা-ঘাটে দেখে এঁদের মতো হাত-পা হীন মানুষদের দেখলে সামর্থ্য অনুযায়ী দানও করছেন। কখনও-সখনও এঁদের মধ্যে দু-এক জনের জীবনের দুর্ঘটনার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে দুঃখও প্রকাশ করেছেন প্রাণভরে। তবে আপনি কি জানেন, বিশ্বের মধ্যে সব প্রতিবন্ধীই কিন্তু দুর্ঘটনার শিকার নন? কিছু মানুষ ইচ্ছাকৃত প্রতিবন্ধকতার শিকার।

বিষয়টি অবাক হওয়ার মতোই। পৃথিবীতে এমন মানুষও রয়েছেন, যাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে প্রতিনিয়ত আঘাত করে যাচ্ছেন প্রতিবন্ধী হওয়ার লক্ষ্যে। এঁদের কাছে হাত-পা ইত্যাদির সঠিকভাবে কাজ করার অর্থই হল চূড়ান্ত অসুবিধা। এঁদের কাছে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেন অতিরিক্ত বোঝার মতো। এগুলোকে বাদ দিলে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেন বলে মনে করেন এঁরা।

ডাক্তাররা অবশ্য জানাচ্ছেন, এটি আদতে একটি স্নায়ুরোগ। এই রোগ সম্পূর্ণ মানসিক। সারা বিশ্বে হাতে গোনা কয়েকজন মানুষের মধ্যেই এই রোগ দেখা যায়। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলে ‘অ্যাপোটেমনোফিলিয়া’। এঁদের কাছে এদের হাত-পা যেন বোঝার মতন। এঁরা সবসময়ে মনে করেন, তাঁদের দেহে এগুলি যেন অতিরিক্ত অঙ্গ। তাই এঁরা অঙ্গচ্ছেদনের মাধ্যমে এই ‘দুর্দশা’ থেকে মুক্তি পেতে চান। এই ধরনের মানুষকে ‘ট্রান্সএবলড’ বা প্রতিবন্ধীত্বকামী বলা হয়ে থাকে।

কিন্তু এমনটা কেন করেন এঁরা? সম্প্রতি কানাডার একদল গবেষক এই বিষয়ের উপরে গবেষণা করেছেন। বিশ্বের এই ধরনের ৩৭জন মানুষের উপরে গবেষণা চালান তাঁরা। গবেষণার পর কানাডিয়ান গবেষক ক্লাইভ বল্ডউইন জানিয়েছেন, “এটি সম্পূর্ণ মানসিক রোগ। শুধুমাত্র হাত-পা কেটে বাদ নয়, কেউ কেউ তো অন্ধ পর্যন্ত হয়ে গিয়েছেন। এঁরা প্রত্যেকেই দুর্ঘটনার আয়োজন করে নিজেদের শরীর থেকে অতিরিক্ত অঙ্গ বাদ দিতে সক্ষম হয়েছেন।” যদিও নিজেদের অতিরিক্ত মনে হওয়া অঙ্গ বাদ দিয়ে সেই স্থানে মেকানিক্যাল বডি পার্ট লাগানোর ঘটনাও রয়েছে অনেকগুলি। তবে এঁদের প্রত্যেকেই হাত-পা-চোখ বাদ দিয়ে সুস্থ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন আগের থেকে অনেক বেশি।

সাধারণ সুস্থ মানুষ এঁদের স্রেফ পাগল বলে আখ্যা দিয়েছেন। আর এঁরা নিজেরা কিন্তু ভালই আছেন প্রতিবন্ধী হয়ে। বরং শারীরিকভাবে বাড়তি সুবিধা উপভোগ করছেন তাঁরা।