
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রশাসন নিরপেক্ষ রাখতে আগাম প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। নির্বাচনের সময় প্রশাসন ক্যাডারের কোন কোন ব্যাচ থেকে ডিসি, ইউএনও এবং এসি ল্যান্ড নিয়োগ দেওয়া হবে, তা একরকম নিশ্চিত। কিন্তু ওইসব ব্যাচের কারা দায়িত্ব পালন করবেন, তা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে অনেকের কপালে। কারণ, সংশ্লিষ্ট ব্যাচগুলোর বেশির ভাগ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ দেওয়া। অথচ নির্বাচন সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে পুলিশের পাশাপাশি এসব কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ বিষয়টি মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট ব্যাচগুলো থেকে দলমতনিরপেক্ষ পেশাদার কর্মকর্তা বাছাই করা হচ্ছে।
অপরদিকে একই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যুগ্মসচিব থেকে তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কয়েকটি ধাপে। এক্ষেত্রে প্রধান মানদণ্ড হলো কোনো অবস্থায় যাতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের কোনো দোসর নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কোনো পদে বসতে না পারেন। কেননা গত দশ মাসে দোসরদের অনেকে জার্সি বদল করে অন্তর্বর্তী সরকারপন্থি হওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ হতে চাইছেন বিএনপিপন্থি। অনেকে এ চেষ্টায় সফলও হয়েছেন। ফলে তাদের হাতে নির্বাচনের নাটাই থাকলে যে কোনো ধরনের সূক্ষ্ম কারচুপিসহ নানারকম ষড়যন্ত্র হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে। এজন্য যাচাই-বাছাই অনিবার্য হয়ে উঠেছে। তবে এসব যাচাই-বাছাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কিংবা সরকারের তরফ থেকে হচ্ছে না। সরকার এ ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন হওয়ায় আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে অবসরে যাওয়া প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের একটি অংশ আনঅফিশিয়াল তালিকা প্রস্তুত করছে।
সূত্র জানায়, এ বিষয়ে ঈদের আগে থেকে প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং গত সপ্তাহে প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে তারা প্রশাসনের মধ্যে কোনো উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়াতে চান না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে তারা এ কাজটি করেছেন। নির্মহভাবে বিশ্লেষণ করলে তারা সরকারের কাজটি বিনা পারিশ্রমিকে করে দিচ্ছেন। তাদের তালিকাটি যথাসময়ে সরকারের শীর্ষপর্যায়েও পৌঁছানো হবে।
এছাড়া অপর একটি সূত্র জানায়, কর্মরত কর্মকর্তাদের মধ্যে কারা প্রকাশ্যে ও গোপনে কোন কোন রাজনৈতিক মতাদর্শের, সে বিষয়ে পৃথক একটি তালিকাও করা হচ্ছে। এর ফলে আগামী দিনে নির্বাচনের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করতে সক্ষম হবে, তাদের প্রশাসন চালাতে তেমন একটা বেগ পেতে হবে না।
এদিকে যারা অতিমাত্রায় আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রকাশ্যে ও গোপনে সক্রিয়, তাদের বিষয়ে পৃথক আরও একটি তালিকা চূড়ান্তকরণের কাজ চলমান রয়েছে। সচিব পদে কর্মরতসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ফ্যাসিস্টের চিহ্নিত দোসরদের একটি তালিকা ইতোমধ্যে সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে। ওই তালিকা থেকে গত সপ্তাহে কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক একজন সচিব যুগান্তরকে বলেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার শুধু দেশকে ধ্বংস করেনি, প্রশাসনকেও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। দলীয় বিবেচনার বাইরে তারা কাউকে নিয়োগ দেননি বললে ভুল বলা হবে না। এ কারণে ক্যাডার-ননক্যাডার নির্বিশেষে বেশিরভাগ কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন আওয়ামী লীগের পরিবার থেকে। অথবা কাউকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও আওয়ামী লীগ করতে হয়েছে। এজন্য দলীয় রোগে আক্রান্ত বিদ্যমান প্রশাসন দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা খুবই কঠিন হবে। তবে যারা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে পদোন্নতি বঞ্চনাসহ নানারকম হয়রানির শিকার হয়েছেন, তারা এখন যথাযথ মূল্যায়নের প্রকৃত হকদার। এ বিষয়টি সবাইকে মাথায় রাখতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘সার্ভিসে থেকে দলবাজি কিংবা পক্ষপাতিত্ব করার সুযোগ নেই। অতীতে যারা দলবাজি করেছেন, এখন তাদের পরিণতি দেখেও কি শিক্ষা হয় না?’