কহিনুর | স্টাফ রিপোর্টার: পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় দেশে গণমাধ্যমের ওপর চাপ, দমন-পীড়ন ও হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২২ ডিসেম্বর ২০২৫) বাউফল প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এ মানববন্ধনে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের পাশাপাশি নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বাউফল প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সভাপতি ও দৈনিক আমার দেশ-এর বাউফল উপজেলা প্রতিনিধি মোঃ জলিলুর রহমান। এতে বক্তব্য দেন নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক মানবকণ্ঠ-এর প্রতিনিধি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, মাই টিভির বাউফল প্রতিনিধি মোঃ অহিদুজ্জামান ডিউক, দৈনিক প্রথম আলো-এর বাউফল প্রতিনিধি এবিএম মিজানুর রহমানসহ অন্যান্য সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
সংবাদপত্রে হামলার ইতিহাস নতুন নয়
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে গণমাধ্যমে হামলা ও দমন-পীড়নের ইতিহাস নতুন নয়। স্বাধীনতার আগে সামরিক আগ্রাসন, স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রীয় নিষেধাজ্ঞা এবং সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক উত্তেজনায় জনতার সহিংসতায় পত্রিকা অফিসে অগ্নিসংযোগ—সব মিলিয়ে গণমাধ্যম বারবার সংকটের মুখে পড়েছে। সম্প্রতি দৈনিক প্রথম আলো ও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার-এর কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ সেই ধারাবাহিকতারই অংশ।
ইত্তেফাক পুড়িয়ে দেওয়ার নজির
দৈনিক বাংলাদেশের আলো-এর বাউফল প্রতিনিধি মোঃ তরিকুল ইসলাম (মোস্তফা) বলেন, ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর সময় ঢাকায় দৈনিক ইত্তেফাক-এর অফিস ও ছাপাখানায় আগুন দেওয়া হয়। স্বাধীনতা ও বাঙালির অধিকার আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় পত্রিকাটি দখলদার বাহিনীর টার্গেটে পরিণত হয়। এটি ছিল স্বাধীনতার কণ্ঠ স্তব্ধ করার সরাসরি চেষ্টা।
রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে গণমাধ্যম বন্ধ
বক্তারা আরও বলেন, স্বাধীনতার পর গণমাধ্যম দমনের বড় উদাহরণ হিসেবে দৈনিক আমার দেশ-এর কথা উল্লেখযোগ্য। ২০১০ সালে প্রশাসনিক অভিযানের মাধ্যমে পত্রিকাটির অফিস সিলগালা ও প্রকাশনা বন্ধ করা হয়। মামলা ও নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘদিন পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশে ফিরতে পারেনি। তবে বর্তমানে নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে পত্রিকাটি পুনরায় প্রকাশিত হচ্ছে।
সম্প্রচারমাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ
মাই টিভির প্রতিনিধি মোঃ অহিদুজ্জামান ডিউক বলেন, ২০১৩ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় দিগন্ত টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে পিস টেলিভিশনের সম্প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়। এসব সিদ্ধান্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করে।
প্রথম আলো–ডেইলি স্টারে হামলা
দৈনিক প্রথম আলো-এর বাউফল প্রতিনিধি এবিএম মিজানুর রহমান বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরে ঢাকার কারওয়ান বাজারে দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার-এর কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে অফিসের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সাংবাদিকদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে। আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠনগুলো এ ঘটনাকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর বড় আঘাত হিসেবে দেখছে।
তিন ধরনের চাপের কথা বললেন সভাপতি
সভাপতির বক্তব্যে মোঃ জলিলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম ইতিহাসে তিন ধরনের চাপ স্পষ্টভাবে দেখা যায়—
১) সামরিক শক্তির মাধ্যমে সরাসরি দমন (১৯৭১),
২) রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ (আমার দেশ, দিগন্ত টিভি, পিস টিভি),
৩) রাজনৈতিক উত্তেজনায় জনতার সহিংসতা (প্রথম আলো–ডেইলি স্টার)।
তিনি বলেন, “মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দুর্বল হলে গণতন্ত্রও দুর্বল হয়ে পড়ে।”
সভাপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মানববন্ধনের কর্মসূচি শেষ হয়।


