
এস.এম.মনির হোসেন জীবন: রাষ্ট্রকে বিপন্ন করার মতো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে ইন্টারনেট ও ফেসবুক বন্ধ করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
তিনি আরো বলেন, ৪ আগস্ট শনিবার নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে ঢাকায় তান্ডবলীলা চালানো হয়। এরপর সন্ধ্যা থেকে ২৪ ঘণ্টা থ্রিজি ও ফোরজি ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সরকার।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর হোটেল র্যাডিসনে বেøা হল রুমে ‘আইটিইউ-বিটিআরসি এশিয়া-প্যাসিফিক রেগুলেটরস রাউন্ডটেবিল’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী উদ্ধোনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
‘আইটিইউ-বিটিআরসি এশিয়া-প্যাসিফিক রেগুলেটরস রাউন্ড টেবিল’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক, এশিয়া-প্যাসিফিক রেগুলেটরস এর আঞ্জলিক পরিচালক (ওড়হব-শড়ৎড়রাঁশঃ) সহ আইটিই’র বিভিন্ন দেশের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এতে বক্তব্য রাখেন এবং বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
আগামীতে জাতীয় নির্বাচন বা অন্য বিষয়কে সামনে রেখে ইন্টারনেট ¯েøা ডাউন করা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আমি একটি বিষয় নিশ্চিত করে বলতে পারি- সবার আগে রাষ্ট্র, জনগণের নিরাপত্তা ও অন্য বিষয় গুলো। এটি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আমার যদি এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়, যে পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘিœত হবে কিংবা জনগণের নিরাপত্তা বিঘিœত হবে, তখন প্রযুক্তির দিকে তাকিয়ে থাকা কোনো অবস্থাতেই নয়। আমাকে বৃহত্তর স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্রতম স্বার্থ গুলো ’’সেকরিফাইজ’’ করতেই হবে। এটি সঙ্গত কারণেই করতে হবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
তিনি বলেন, আজ আমি যদি দেখি, ফেসবুক আমার রাষ্ট্রকে বিপন্ন করে ফেলেছে, তাহলে আমার রাষ্ট্র বাঁচাবো না ফেসবুক বাঁচাবো, আমাকে অবশ্যই রাষ্ট্র বাঁচাতে হবে এবং তার জন্য যা করার তা আমাকে দেশের স্বার্থে করতে হবে।
গুজব গুলো ফিল্টারিং করার ক্ষেত্রে দেরি হচ্ছে কেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী বলেন, ফেসবুকে আমাদের ফিল্টারিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা কেবল ফেসবুককে অনুরোধ করতে পারি। ফেসবুক তার স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী কাজ গুলো করে।
তিনি আরো বলেন, এতোদিন আমাদের ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না, এখন ফেসবুকের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ট যোগাযোগ আছে। ফেসবুক আমাদের সব কথা শোনে না, কিন্তু কিছু কিছু কথা শোনে।
টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে বলেন, এই ব্যবস্থাটিকে আমরা মনে করি পর্যাপ্ত না। সে কারণে টেলিকম বিভাগের মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়ক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটি শেষ করতে পারলে সম্পূর্ণভাবে কনটেন্ট ফিল্টারিং বা যাচাই-বাছাই করতে সক্ষম হবো। প্রকল্পটি এতো দিন টেবিলে ছিল। এখন এটি মাঠে আছে।
তথ্য প্রযুক্তির আমূল পরিবর্তন প্রসঙ্গ তুলে ধরে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী বলেন, দুনিয়ায় প্রচলিত প্রযুক্তির আমূল পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে মোবাইল ও মোবাইল ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন দেখছি। এখানে দাঁড়িয়ে থেকে আমি বোধহয় কল্পনাও করতে পারবো না যে ৫-জি আমার জীবনধারা কেমন করে বদলাবে,
এবিষয়ে মন্ত্রী আরো বলেন, ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রীয় জীবন সমস্ত কিছুর ক্ষেত্রে কী প্রভাব বিস্তার করবে ? এই আলোচনার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ গুলো খুঁজে বের করবে। আমি একদিকে নিয়ন্ত্রণ করবো, আরেক দিক থেকে বাধা দেবো না। আমার বিকাশ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জায়গাটাও ধরে রাখতে হবে।
মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছে বকেয়া বাবদ পাওনা আদায় প্রসঙ্গে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, কোনো অবস্থাতেই আমাদের অবস্থানটাকে আইনের বাইরে নেবো না। যার যা করার তাকে তা করতে হবে। আমি যেমন করে রাজস্ব ফাঁকি দিতে দেবো না। যেমন করে জনগণের সঙ্গে কোনো ধরনের কূটবুদ্ধি চালাতে দেবো না।
আইনি পদক্ষেপ নিয়ে রাজস্ব আদায় করা হবে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এব্যাপারে নিঃসন্দেহে কাউকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার কোনো সুযোগ রাখা হবে না। আমরা আদায় করবো।
এবিষয়ে মন্ত্রী হুশিয়ারী দিয়ে আরো বলেন, যেখানে যে আইন মেনে চলা দরকার সেই আইন সবাইকে মেনে চলতে হবে। আমরা যেমন করে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিসেবে আমাদের নিয়ম-কানুন মেনে চলবো। তেমনি করে যাদের নিয়ন্ত্রণ করি তাদেরও আমাদের নিয়ন্ত্রণের বিধি-বিধান মেনে চলতে হবে।
‘আইটিইউ-বিটিআরসি এশিয়া-প্যাসিফিক রেগুলেটরস রাউন্ড টেবিল’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান আজ সোমবার সকালে ঢাকায় শুরু হয়েছে। আগামী পরশু বুধবার বিভিন্ন অনুষ্টানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। এতে আইটিইউ-বিটিআরসি এশিয়া-প্যাসিফিক রেগুলেটরস বাংলাদেশ ছাড়া ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা অংশ নিয়েছেন।