
লাইফস্টাইল ডেস্কঃ সারাদিন বসে কাজ করার ক্ষতিকারক দিকগুলো
- একটি নিরীক্ষা থেকে জানা গিয়েছে, আমরা প্রতিদিন অফিসে গড়ে প্রায় ৯-১০ ঘণ্টা বসে থাকি। এর জেরে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ সঠিক নিয়মে কাজ করা বন্ধ করে দিতে থাকে।
- যাঁরা দিনে ছ’ঘণ্টার বেশি বসে থাকেন তাঁদের মৃত্যুর ঝুঁকি, যাঁরা দিনে তিন ঘণ্টার কম সময় বসে কাজ করেন তাঁদের চেয়ে অন্তত ৪০% বেশি হয়।
- অতিরিক্ত বসে থাকার কারণে আমাদের শরীরের মেদ বৃদ্ধি পায়। মূলত পেট ও কোমরের কাছে।
- অনেকক্ষণ বসে থাকার কারণে পায়ের স্বাভাবিক নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়। যে সকল এনজাইম শরীরের ফ্যাট কমিয়ে আনতে সাহায্য করে সেগুলো নিঃসরণের পরিমাণও ৯০% কমে যায়।
- যাঁরা বসে কাজ করেন, তাঁদের হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের থেকে প্রায় দ্বিগুণ বেশি। যাঁরা প্রতিদিন তিন ঘন্টার বেশি বসে টেলিভিশন দেখেন, তাঁদের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ৬৪% বৃদ্ধি পায় এবং তাঁরা ব্যায়াম করেও শরীরের ফ্যাট কমাতে পারেন না।
এবার দেখে নেওয়া যাক, দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করলে শরীরের কোন অংশের কী রকম ক্ষতি হয়
কাঁধ এবং পিঠ
কোনও মানুষ তিন-চার মিনিটের বেশি সোজা হয়ে বসে থাকতে পারে না। এর ফলে, শিরদাঁড়ার লিগামেন্টের বেশ ক্ষতি হয়। সঙ্গে পিঠের পেশিতেও বেশ চাপ পড়ে। কাঁধ এবং ঘাড়ের সমস্যাও দেখা দেয়।
কোমর এবং পা
বেশিক্ষণ বসে থাকলে, কোমরের নীচের অংশ ও পায়ের পেশি ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যায়। এর ফলে, হিপ-জয়েন্টে সমস্যা দেখা দেয়। রক্ত চলাচলেও সমস্যা হয়। যার ফলে পায়ের গোড়ালি ফুলে যায়।
হৃদযন্ত্র
দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় হার্ট সবচেয়ে ভাল কাজ করে। কিন্তু, সারাক্ষণ বসে কাজ করার ফলে, হার্টের সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
ফুসফুস এবং মস্তিষ্ক
সারা দিন একইভাবে বসে থাকার ফলে, ফুসফুসে কম অক্সিজেন ঢোকে। এর ফলে ফুসফুসের আয়তনও ধীরে ধীরে ছোট হতে থাকে। ফুসফুসে কম অক্সিজেন ঢোকার ফলে, মস্তিষ্কেও তার প্রতিফলন ঘটে। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যায়।
প্যানক্রিয়াস
দিনের বেশির ভাগ সময়ে বসে থাকার ফলে, প্যানক্রিয়াসে তৈরি ইনসুলিন হরমোন কমতে শুরু করে। শরীরের গ্লুকোজ ভাঙতে সাহায্য করে ইনসুলিন। ইনসুলিন তৈরি না হওয়ার ফলে ডায়াবেটিস হওয়ার হার বেড়ে যায়।
পাচনতন্ত্র
সারাক্ষণ বসে কাজ করার ফলে খাবার হজম হতে সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে গ্যাস, বদহজম, এমনকী কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও হয়।
প্রতিরোধ এবং প্রতিকার
অনেকেরই অফিসে প্রায় ন’ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। এভাবে বসে থাকার পর ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলেও খুব একটা উপকার হয় না। তাই যখনই সময় পাবেন চেয়ার থেকে উঠে পড়ুন। হালকা স্ট্রেচিং করুন বা হেঁটে আসুন। সামনের দিকে ঝুঁকে বসা বা সোজা হয়ে বসার থেকে ১৩৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গল বা হেলান দিয়ে বসলে মেরুদণ্ডের উপর চাপ কম পড়ে। মাঝেমধ্যে ওইভাবে বসার চেষ্টা করুন। কোমরে এবং ঘাড়ের ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
ডেস্ক ওয়ার্কআউট (ব্যায়াম)
- হাত দু’টো শরীরের দু’পাশে রিলিজ করে দিন। এরপর কাঁধ, হাত এবং আঙুল আসতে আসতে নাড়ান।
- কাঁধ সার্কুলার মোশনে ঘোরান।
- পা দু’টো ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গলে তুলে ঘোরাতে থাকুন বেশ কয়েকবার।
- চোখে জলের ঝাপটা দিন।
- কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিজের চোখ বন্ধ করুন। তারপর চোখ খুলে দূরে কোনও কিছুর উপর ফোকাস করুন।
- সম্ভব হলেও একটু হেঁটে নিন।
- এক ঘণ্টা অন্তর একবার উঠে দাঁড়ান।
সুস্থ থাকার টুকিটাকি
- ফোনে কথা বলার সময়ে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়ুন।
- ৩০ মিনিট অন্তর, নিজের জায়গাতেই মিনিট দুই-তিনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকুন।