
এস.এম.নাহিদ, (বিশেষ প্রতিনিধি) : রাজধানীর খিলক্ষেত পূর্ব নামাপাড়া এলাকায় বসবাসকারী সাবেক ভূমি কর্মকর্তা সালামত উল্ল্যাহর বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে সরকারি চাকরির আড়ালে তিনি গড়ে তুলেছেন দুর্নীতির এক অন্ধকার সাম্রাজ্য, যা প্রশাসনের নীরবতা এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ফুলেফেঁপে উঠেছে।
কে এই সালামত উল্ল্যাহ ?
ফেনীর ফুলগাজী থানার মধ্যম শ্রীচন্দ্রপুর গ্রামের জেলে পরিবারে জন্ম নেওয়া সালামত উল্ল্যাহর শৈশব কেটেছে টিকে থাকার লড়াইয়ে। বাবা ছিলেন পেশাদার মাছ বিক্রেতা আর ছেলে ভারত থেকে পাতার বিড়ি এনে বিক্রি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতেন। এই চরম দারিদ্র্যের ভেতর থেকেই সুযোগ পেয়ে ঢুকে পড়েন সরকারি চাকরির নিরাপদ আশ্রয়ে। পরে বিভিন্ন জেলার ভূমি অফিসে কর্মরত থেকে দুর্নীতির কারিগর হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ কর্মস্থল গোপালগঞ্জ ভূমি অফিস থেকে অবসরে যান তিনি।
নব্বইয়ের দশকে রাজধানীর খিলক্ষেত নামাপাড়ায় পা রাখেন সালামত। সেসময়কার খালি জায়গায় বাঁশ-খুঁটি, মোটা কাপড় আর বস্তা দিয়ে তৈরি ঘরেই বাস করতেন এই স্বল্প আয়ের সরকারি কর্মচারী। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে দৃশ্যপট বদলে যায়। একসময় যে স্থানে বস্তিঘর ছিল, সেই জায়গাতেই এখন দাঁড়িয়ে আছে ‘নাহার হাউজ’ নামের ৬তলা ভবন। দুর্নীতির বীজ বপনের পর ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় সেই বীজে জলসেচ দিয়েছেন সালামত—ফলে গড়ে উঠেছে অবৈধ সম্পদের এক বিস্তীর্ণ সাম্রাজ্য।
সালামত উল্ল্যাহর যত সম্পদ :
অনুসন্ধানে সালামত উল্ল্যাহর সম্পদের তথ্য রীতিমত চমকে ওঠার মতো।সালামত উল্ল্যাহ তার স্ত্রী, সন্তান এমনকি ছেলের স্ত্রীর নামেও রেখেছেন বিঘা বিঘা জমি।৪ ছেলে সন্তানের জনক এই সালামত উল্ল্যাহর ইতিমধ্যে এক ছেলে মারা গিয়েছে।আইনের চোখ এড়াতে রূপগঞ্জের খুদেবাজারে সেই ছেলের শশুরবাড়ী এলাকায় ছেলের স্ত্রীর নামেও রেখেছেন ৯০বিঘা সম্পত্তি।এছাড়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানা এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর পাশে সালামত উল্ল্যাহর রয়েছে ২৫বিঘা জমি।পূর্বাচল উপশহরে রয়েছে একাধিক প্লট। গাজীপুরে বিশাল জায়গা নিয়ে রয়েছে বড়বড় গোডাউন।সেখান থেকে মোটা অংকের টাকা ভাড়া পান প্রতি মাসে।
খিলক্ষেত নামাপাড়া এলাকায় ৭টি বহুতল ভবন সহ প্রায় ৭(সাত) বিঘা জমি রয়েছে সালামত উল্ল্যাহর।বর্তমান বাজারে যার আনুমানিক মুল্য প্রায় ৯০(নব্বই)কোটিরও বেশি।এছাড়া নামাপাড়ায় চ্যাম্পিয়ন ডেভেলপার কোম্পানির ব্যানারে নির্মাণাধীন ১০ তলা নবনির্মিত একটি ভবন রয়েছে ।অথচ জয়েন্ট ষ্টকের রেজিষ্ট্রেশন তালিকায় খিলক্ষেতের এই ‘চ্যাম্পিয়ন ডেভেলপার কোম্পানির নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিতেই ভূয়া কোম্পানির ব্যানারে নির্মিত হচ্ছে এই ভবন।এমনকি রাজউকের নীতিমালার বাইরেই চলছে এই ভবনের নির্মান কাজ।বিভিন্ন সূত্র তথ্যটি নিশ্চিত করেছে।
সম্পদের পাশাপাশি সালামত উল্ল্যাহর স্ত্রী-সন্তানদের নামে-বেনামেও রয়েছে গোপন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। মতিঝিল রূপালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় বিল্ডিংয়ের উপরে তার ছেলের পরিচালনায় একটি সিকিউরিটি কোম্পানি রয়েছে।ছালামত উল্লাহর সমস্ত কুকর্মের গোপন বৈঠক এবং আর্থিক লেনদেন এই অফিস থেকেই হয়ে থাকে বলে তথ্য রয়েছে।এমনকি সালামত উল্ল্যাহ ফ্যাসিষ্ট হাসিনার আশির্বাদপুষ্ট হওয়ায় এখান থেকে বিদেশেও টাকা পাচার করতে পারেন বলে অনেকের ধারনা।
সালামত উল্ল্যাহর সর্বশেষ থাবা :
খিলক্ষেত বোটঘাট নামাপাড়া পানিরপাম্প ‘Y’মোড়ের জায়গাও নিজ দখলে নিয়ে ভোগ করছেন সালামত উল্ল্যাহ।গুরুত্বপূর্ণ ও মুল্যবান এই জায়গাটির প্রকৃত মালিকগন বিদেশে অবস্থানকালে মৃত্যুবরন করায় এবং তাদের ওয়ারিশদের কোন হদিস না মেলায় জাল-জালিয়াতি ও পেশি শক্তি ব্যাবহার করে ফেনী জেলার ফুলগাজীর শৈশবে সেই পাতার বিড়ির ব্যাবসায়ী সালামত উল্ল্যাহ মালিক সেজে বসে আছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়,হাফেজ দর্জি,ইসমাইল দর্জি,আয়াত আলী দর্জি ও আহম্মদ আলী দর্জির (যুতের মালিক) নিকট হইতে ১৯৭৫ সনে খরিদ সূত্রে দলিল মূলে জমির মালিক হন চারজন।আর এস রেকর্ডের তথ্য অনুযায়ী – ডা:আব্দুর রহিম ও তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৭৪) শতাংশ এবং আব্দুল হালিম চৌধুরী ও তার স্ত্রী জাহানারা বেগম যথাক্রমে (৯৫.২৫) শতাংশ জমির মালিক।তার মধ্যে ডা:হালিম চৌধুরী ও তার স্ত্রী আনোয়ারা তাদের অংশের কিছু জমি বিক্রি করেন।
সূত্রে জানা যায়,প্রকাশ্যে জাল- জালিয়াতি করে সেই জমির বাকী অংশের মালিক এখন সালামত, তার ভাই গোলাপ সহ সালামত উল্ল্যাহর পরিবার।এই জমিতেই ছোট ভাই গোলাপ বহুতল ভবন নির্মান করছেন।
এদিকে জমির অন্য অংশের (৯৫.২৫) শতাংশের মালিকও বিদেশে অবস্থানকালে মৃত্যু সনদ অনুযায়ী ২৩শে নভেম্বর ১৯৯০ সনে মারা যায়।আটজনকে ওয়ারিশ বানিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে বর্তমানে গোটা জমি গিলে নিয়েছেন সালামত উল্লাহ।অথচ এই ৮জনের কেউই উক্ত জমির কোন খাজনা খারিজ পরিশোধ করার ডকুমেন্ট দেখাতে পারিনি।প্রকৃত সত্য জানার লক্ষ্যে ওয়ারিশ গোলাম কিবরিয়ার মুঠাফোনে অসংখ্যবার কল দিলেও ফোন রিসিভ করেনি কেউ।তাছাড়া ওয়ারিশদের সাথে তাদের ছেলেমেয়েদের সাথে তাদের মৃত নানা/দাদা সম্পর্কে জানার জন্য কথা বলতে চাইলে শুধু গোলাম কিবরিয়ার সন্ধান পাওয়া যায়।তার পরিবার কিংবা অন্যদের হদিস মেলেনা।এই আটজন কথিত ওয়ারিশদের সকলকে আলাদা আলাদা জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের জাতীয় পরিচয় পত্রের জালিয়াতি সহ সালামত উল্ল্যাহর প্রতারনায় গোপন কৌশল বের হয়ে আসবে।
সালামত উল্ল্যাহর এক ছেলে স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করার সুবাদে তিনি ও তার স্ত্রী ইতিমধ্যে মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেছেন।সূত্রে জানা যায়, তিনি বিদেশে মোটা অংকের অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন।গনমাধ্যমে সালামত উল্ল্যাহর অবৈধ ও দূর্নীতির সম্পদে বিস্ফোরণ ঘটায় বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর ও গ্রেফতার এড়াতে চলতি মাসের মধ্যে যেকোনো সময়ে গোপনে দেশ ছেড়ে পালাতে পারে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়।