Share this:
তফিজ উদ্দিন আহমেদ, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দি
এরই পরিপেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসনের গঠিত কমিটির তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ওই শিক্ষককে তিরস্কারসহ চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। জানা গেছে, উপজেলার ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের টংগুয়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সতীশ চন্দ্র রায় কৌশলে স্কুলের জমি হাতিয়ে নিয়ে ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম করেন। এর প্রতিকার চেয়ে ইউএনও বরাবর অভিযোগ দেন স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী রহিদুল ইসলাম রাফি, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি গোলাম রব্বানী ও চিত্তরঞ্জন রায় এবং স্থানীয় বাসিন্দা মহিউদ্দিন।
এরপর অভিযোগ তদন্তে উপজেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করে। এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে সরেজমিনে স্কুল পরিদর্শন ও সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেন ইউএনও মো. তাজ উদ্দিন এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক আহমেদসহ তদন্ত কমিটির সদস্যরা। তদন্তে স্বেচ্ছাচারিতা, আর্থিক অনিয়ম ও বিদ্যালয়ের স্বার্থ পরিপন্থী অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় সতীশ চন্দ্র রায়কে তিরস্কারসহ চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। সেই সঙ্গে জোষ্ঠ শিক্ষক আমিনুল ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে মো. আনিছুর রহমানকে দায়িত্ব প্রদান করে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। ইউএনও ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. তাজ উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা জানা গেছে যে, প্রধান শিক্ষক সতীস চন্দ্র রায় বিদ্যালয়ের জমি সংরক্ষণ না করে নিজের দখলে নিয়ে বিদ্যালয়ের জমি বিদ্যালয়ের নামে সংশোধনী রেজিস্ট্রি না করে অন্য ওয়ারিশের কাছে নিয়মবহির্ভূতভাবে তাঁর নিজ নামে ৪৮ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে নেন। ওই অংশে স্কুলের খেলার মাঠ ছিল। প্রধান শিক্ষক কৌশলে জমি দখলে নেওয়ার পর সেখানে আধা পাকা বাড়ি নির্মাণ করেন। এরপর নিজে বসবাসসহ দোকান ভাড়া দেন। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের জমি ও পুকুর নিয়ম ছাড়াই গোপনে অর্থের বিনিময়ে এক ব্যক্তিকে ব্যবহার করতে দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ইতিপূর্বে এসব অভিযোগের প্রতিকার চেয়েও তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ছত্রছায়ায় প্রধান শিক্ষক বারবার পার পেয়ে যান। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জমি দখল, আর্থিক অনিয়ম ও নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগে সতীশ চন্দ্র রায়ের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং স্থানীয় বাসিন্দারা।স্থানীয় বাসিন্দা রহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব ছিল,সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের কিন্তু তিনি নিজেই সম্পদ দখল করেছেন, যা আসলে মেনে নেওয়ার মতো নয়। তাই আমরা এর প্রতিকার চেয়ে আন্দোলন করেছি।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক প্রধান শিক্ষক সতীশ চন্দ্র রায় কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। স্কুলের জমি অন্যজনকে নিয়ম না মেনে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলো তো অনেক আগের ঘটনা। এত জানাশোনা ছিল না, তাই হয়ে গেছে।’ তবে রেজুলেশন করে লিজ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তাজ উদ্দিন বলেন, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সতীশ চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ নিয়ম মেনে ধারাবাহিকভাবে তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তে তাঁর অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় বিধি অনুযায়ী অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে আনিছুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
