
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের হত্যার ১১ বছরেও মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার বিচারে দীর্ঘসূত্রিতায় অসন্তোষ প্রকাশ করে তা দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি করেছে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সামনে থেকে অধ্যাপক তাহের হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদ র্যালি করে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। র্যালি শেষে বিভাগে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
স্মরণসভায় বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানান। এ সময় বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক খোন্দকার ইমামুল হক, অধ্যাপক হামিদুর রহমান, অধ্যাপক হাবিবুর রহমান, অধ্যাপক সৈয়দ সামসুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক মৃণাল কান্তি রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক খোন্দকার ইমামুল হক জানান, প্রথমে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এ মামলার রায় হয় ২০০৭ সালে। পরবর্তীতে আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করলে তাদের সাজা কমে যায়। পরে মামলাটি গড়ায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। এরপর মামলাটির অগ্রগতি নেই। তিনি দ্রুত এ মামলার বিচার নিষ্পত্তির মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি কামনা করেন।
২০০৬ সালের ১ ফেব্রুবয়ারি রাতে অধ্যাপক তাহের বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার পশ্চিম ২৩/বি বাসা থেকে নিখোঁজ হন। পরে ৩ ফেব্রুয়ারি সকালে নিজ বাসার পেছনের সেপটিক ট্যাংক থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ অধ্যাপক তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীরকে আটক করে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ৭ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক তাহেরের সহকর্মী জামায়াতপন্থি শিক্ষক মিয়া মো. মহিউদ্দিনকে আটক করে পুলিশ। হত্যার ঘটনায় শিক্ষক তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভী নগরীর মতিহার থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের ১৮ মার্চ মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন উপ-পরিদর্শক আহসানুল কবির জামায়াতপন্থি শিক্ষক মিয়া মহিউদ্দিন ও তৎকালীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহীসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
পরে ২০০৭ সালের ৩ জুলাই রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। ২০০৮ সালের ২২ মে আদালত শিক্ষক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম, জাহাঙ্গীরের ভাই শিবিরকর্মী আব্দুস সালাম ও নাজমুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। অভিযোগপত্রের অন্য দুই আসামি বিশ্ববিদ্যালয় শিবির সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও জাহাঙ্গীরের বাবা আজিমুদ্দিনকে বেকসুর খালাস দেয় আদালত। রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করেন আসামিরা। ৫ বছর পর ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়। ওই বছরের ২১ এপ্রিল আপিলের রায়ে শিক্ষক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যু দণ্ডাদেশ বহাল এবং জাহাঙ্গীরের ভাই শিবির কর্মী আব্দুস সালাম, নাজমুল ইসলামের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের দুইজন খালাস ও অন্য দুইজনের সাজা কমানোয় ড. তাহেরের পরিবারের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করা হয়। কিন্তু চারবছর পরেও আপিলের নিষ্পত্তি হয়নি।