
শেরপুর প্রতিনিধি:
শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্তঘেষা বারমারী সাধু লিওর খ্রীষ্টান ধর্মপল্লীতে আগামী ২৭-২৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দু’দিনব্যাপি তীর্থোৎসব উপলক্ষে সর্বত্রই উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এজন্য বৃহত্তর ময়মনসিংহের খ্রিষ্টান অধ্যুষিত অ লে এখন উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। খ্রীস্টধর্মাবলম্বীরা এখন শুধু হিসেব করছেন দিন আর ক্ষণের। কখন আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। তীর্থ উদযাপন কমিটি ইতোমধ্যেই বিভিন্ন প্রস্তুতিমুলক কার্যক্রম সমাপ্ত করেছে।
তীর্থ উদযাপন কমিটির আহবায়ক রেভারেন্ট ফাদার মনিন্দ্র এম. চিরান জানান, প্রায় অর্ধ লক্ষ খ্রীষ্টভক্তের অংশ গ্রহনে ২৭-২৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ‘দয়ার মাতা মারিয়া’ এই মুলসুরের উপর ভিত্তি করে শুরু হতে যাচ্ছে দু’দিন ব্যাপি বাৎসরিক তীর্থোৎসব। এ উপলক্ষে ২৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকেল ৩.০০মিঃ পুর্ণমিলন/পাপ স্বীকার, ৪.০০মিঃ পবিত্র খ্রীষ্টযাগ, রাত ৮ টায় আলোক শোভাযাত্রা, ১১.০০মিঃ আরাধ্য সাক্রান্তের আরাধনা ও নিরাময় অনুষ্ঠান এবং রাত ১২.০০মিঃ নিশি জাগরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
পরদিন ২৮ অক্টোবর শুক্রবার সকাল ৮ টায় জীবন্ত ক্রুশের পথ ও সকাল ১০টায় মহা খ্রষ্টযাগের মাধ্যমে তীর্থোৎসবের সমাপ্তী হবে। ঢাকা খ্রিষ্টধর্ম প্রদেশের অবসরপ্রাপ্ত বিশপ থিওটোনিয়াস গমেজ এবারের তীর্থোৎসবের উদ্ভোধনী খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করবেন। সমাপনী খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করবেন ময়মনসিংহ খ্রীষ্টধর্ম প্রদেশের ধর্মপাল বিশপ পনেন পৌল কুবি সিএসসি। এছাড়াও শেষ দিন শুক্রবার বাংলাদেশ সরকারের ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট আসনের উপ-নির্বাচনে নির্বাচিত প্রয়াত সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর ছেলে মি. জুয়েল আরেং তীর্থোৎসবে উপস্থিত থাকবেন বলে নির্ভরযোগ্য সুত্র জানিয়েছেন। তীর্থস্থানে এসে নিজেদের পাপমোচন করে অধ্যাত্মিক জ্ঞানলাভ করে যার যার ঘরে ফিরে যান তীর্থযাত্রীরা।
এ তীর্থোৎসবে মহাখ্রীষ্টযাগ, গীতি আলেখ্য, আলোক শোভাযাত্রা তথা আলোর মিছিল, নিশীজাগরন, নিরাময় অনুষ্ঠান, পাপ স্বীকার, জীবন্ত ক্রুশের পথসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদী অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। খ্রীষ্টভক্তরা নিজেদের পাপ মোচনে মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর মিছিলে অংশ গ্রহন করে প্রায় দেড় কিঃ মিঃ পাহাড়ী ক্রুশের পথ অতিক্রম করেন। পরে ৪২ ফুট উচু মা-মারিয়ার মুর্তির সামনের বিশাল প্যান্ডেলে সমবেত হয়ে নির্মল হ্দয়ের অধিকারীনি, ঈশ্বর জননী, খ্রীষ্টভক্তের রাণী, স্নেহময়ী মাতা ফাতেমা রাণীর কর কমলে ভক্তি শ্রদ্বা জানায় ও তার অকৃপন সাহায্য প্রার্থনা করে থাকে এ দিন।
তীর্থোৎসবের ব্যাপারে বারমারী ধর্মপল্লীর ভাইস চেয়ারম্যান ও ট্রাইভাল ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মি. লুইস নেংমিনজা বলেন, প্রতিবছর এই তীর্থস্থানে তীর্থযাত্রীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এ বছর প্রায় অর্ধলক্ষাধিক দেশি-বিদেশি খ্রীষ্টভক্তরা তীর্থ যাত্রায় অংশ গ্রহন করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই তীর্থযাত্রীদের জন্য তীর্থ উদযাপন কর্তৃপক্ষ কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। এবারে নিরাপত্তা প্রদানে র্যাবের পাশাপাশি পুলিশ, বিজিবি, দমকল বাহিনী, আনসার, ভিডিপি, গ্রাম পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদল সার্বক্ষনিক নিরাপত্তায় নিয়েজিত থাকবে। তাছাড়া তীর্থযাত্রীদের অধিক নিরাপত্তার জন্য এবার গুরুত্বপুর্ণ স্থানগুলোতে সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে। পারস্পারিক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এই তীর্থ যাত্রা অনুষ্ঠানকে সফল করতে তিনি সকলের সহযোগিতাও কামনা করেন।
উল্লেখ্য, ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহর থেকে প্রায় ১শ কিঃমিঃ, শেরপুর জেলা শহর থেকে ২৫ কিঃ মিঃ ও নালিতাবাড়ী উপজেলা শহর থেকে ১৬ কিঃ মিঃ উত্তরে বাংলাদেশ-ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেষা সবুজ শ্যামলীময় পাহাড় ঘেরা মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের অপুর্ব লীলাভুমি বারমারী খ্রীষ্টধর্মপল্লীতে এ তীর্থ স্থানের অবস্থান। ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশের ১৪ টি ধর্মপল্লী ও সারা দেশের হাজার হাজার খ্রীষ্টভক্তদের প্রাণের দাবি ছিল মা মারিয়াকে ভক্তি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য উপযুক্ত স্থান লাভের। আর বারমারীতে এ স্থান পেয়ে খ্রীষ্টভক্তরা যেন মহা খুশি। খ্রীষ্টভক্তদের দাবীর প্রেক্ষিতে ১৯৯৮ ইং সালে পর্তুগালের ফাতেমা নগরীর আদলে ও অনুকরনে পাহাড় ঘেরা মনোরম পরিবেশে এ তীর্থ স্থানটিকে নির্বাচন করা হয়। ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশের তৎকালীন প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ. গমেজ বারমারী সাধু লিওর ধর্মপল্লীতে ফাতেমা রাণীর তীর্থ স্থান হিসেবে ঘোষনা করেন। এ তীর্থ স্থানের প্রায় ২ কিঃ মিঃ পাহাড়ী টিলায় ক্রুশের পথ ও পাহাড়ের গুহায় স্থাপন করা হয়েছে মা-মারিয়ার মূর্তি। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুই দিনব্যাপি বার্ষিক তীর্থোৎসব পালিত হয়। ধর্মীয় চেতনায় দেশি-বিদেশি হাজার হাজার খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীদের অংশ গ্রহনের মধ্যদিয়ে প্রতি বছর বার্ষিক তীর্থোৎসব পালিত হওয়ায় বর্তমানে এটি আন্তর্জাতিক মহাতীর্থ স্থানের রুপ পেতে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন মুল সুরের উপর ভিত্তি করে বাৎসরিক তীর্থোৎসব পালিত হয়।