‘অল্প টাকায় বাড়ীর পাশে চোখের চিকিৎসা করে ভালই লাগছে’

আল-আমিন, নীলফামারী : শয্যা আর যন্ত্রপাতি সংকটের মধ্যদিয়ে প্রায় দেড় বছর পর চালু হলো নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে চোখ অপারেশন। নেই চাহিদার তুলনায় যন্ত্রপাতি। নেই পর্যাপ্ত ওষুধ। ১০ শয্যার চক্ষু বিভাগটি বর্তমানে আসন সংখ্যা কমিয়ে পাঁচ শয্যায় আনা হয়েছে। বাকী পাঁচটি শয্যা নবজাতকের ওয়াডে সংযুক্ত করা হয়।
পাঁচ শয্যার ইউনিটে দুইজন মেডিকেল অফিসারের বিপরীতে রয়েছে একজন, একজন সিনিয়র কনসালটেন্ট, একজন সহযোগি অধ্যাপক, পাঁচজন নার্স ও আয়া একজন। পাঁচজন নার্স এর বিপরীতে রয়েছে তিনজন। এরমধ্যে একজন মাতৃকালিন ছুটিতে, আরেকজন নাইট করে, বাকী একজন দিয়ে চলছে চক্ষু ওয়াডটি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ওয়াডের একজন সিনিয়র ষ্ট্যাপ নার্স বলেন, ‘পাঁচজনের মধ্যে আমি নার্স আমিই ইনচার্স সব কাজ আমাকেই করতে হয়। একারনে রোগিদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়।’ নীলফামারী মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘ দেড় বছর পর ছানিসহ চোখের অপারেশন শুরু করা হয়েছে। এখন থেকে প্রত্যেক সোমবার করে চোখ অপারেশন ও প্রত্যেক বুধবার আউটডোরে চক্ষু রোগির চিকিৎসা দেয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সম্পদ সীমিত, রয়েছে নানা রকম সীমাবদ্ধতা। এছাড়াও লেন্স সংকট, বায়োমেট্রিক মেশিন ও চোখের পাওয়ার দেখার যন্ত্র নেই। নেই ঔষুধপত্র। রোগিদের সেবার কথা চিন্তা করে ব্যক্তিগতভাবে কিছু যন্ত্রপাতি যোগার করে অপারেশনসহ আউটডোরে চক্ষু রোগির সেবা দেয়া হচ্ছে।’
সরেজমিনে, চক্ষু বিভাগের ভর্তিকৃত জলঢাকা উপজেলার বালাগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম বালাগ্রামের রেনুবালা  (৫৫) জানান, ‘অনেক জায়গায় চোখের চিকিৎসা করে ব্যাথা ও জ্বালাপোড়া ভাল হয়নি। ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ডা. মিজানুর রহমানের পরামর্শে চোখের ছানি অপারেশন করে এখন ভাল আছি।’
একই ওয়াডে সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের শৈলো বালা (৫৪) জানান, ‘এই হাসপাতালে দেড় বছর আগে আমার স্বামীর চোখের অপারেশন করে এখনও ভাল আছে। তাই আমি খবর পেয়ে সোমবার সকালে চোখ অপারেশন করেছি, আমিও এখন ভাল আছি। অল্প টাকায় বাড়ীর পাশে চোখের চিকিৎসা করে ভালই লাগছে।’
উপজেলার চড়াইখোলা ইউনিয়নের দারোয়ানী মোল্ল্যা পাড়ার শফিদুল ইসলাম (৫৬) জানান, ‘চোখের অনেক চিকিৎসা করেও ব্যাথা ও পানি ঝরা কমে না। গত বুধবার হাসপাতালের আউটডোরে চোখ দেখেয়া স্যার অপারেশন করির কইছে। আইজ সকালে অপারেশরন করে ব্যাথা অনেকটা কমছে।’
হাসপাতালের পুরুষ ওয়াডের রোগি ইসমাইল হোসেন (৪৫) বলেন,‘গতকাল বৃহষ্পতিবার বিকালে প্রশাবের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ছাড়া ওয়ার্ডে সকাল পর্যন্ত কোনও ডাক্তার দেখে নাই। এখন বাজে ১২টা। শুনছি, শুক্রবার হলে ওয়াডে কোন ডাক্তারই আসে না।’
এদিকে,বছরের পর বছর ধরে বন্ধ আছে ১০ শয্যার কার্ডিওলজি বিভাগটি। নষ্ট হচ্ছে লাখ লাখ টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম (যন্ত্রপাতি)। শয্যা সংকট, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, শৌচাগার ও ছাড়পোকার কামড় নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ।
হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত রোগি গৌরঙ্গ রায় (৫৫) বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার বিকালে প্রচন্ড পেট ব্যথায় জরুরি বিভাগের চিকিৎসক দেখেছেন। এরপর রাত পেরিয়ে সকাল পর্যন্ত ওয়ার্ডে কোনও চিকিৎসকের দেখা নাই। তাছাড়া ছাড়পোকার কামড় ও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে অভিযোগ ওই ওয়াডের স্বজনদের।’
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. জহিরুল করিম জানান, ‘প্রায় ছয় বছর আগে ২৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত হলেও ১০০ শয্যার জনবল দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। চক্ষুবিভাগের যন্ত্রপাতিসহ ‘স্যালাইন ও ওষুধের’ চাহিদা জানিয়ে কর্তৃপক্ষকে লিখিত আবেদন দেয়া হয়েছে।’
চক্ষু বিভাগের সমস্যার কথা জানতে চাইলে, তত্বাবধায়ক ডা. মো. আবু আল হাজ্জাজ সমস্যার কথা শিকার করে জানান, ‘দীর্ঘ দেড় বছর পর সরঞ্জাম সংকটের মধ্যদিয়ে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের পাঁচ শয্যার চক্ষু ওয়াডে চোখের ছানি অপারেশনসহ আউটডোরে চিকিৎসাসেবা শুরু হয়েছে। আমরা সমস্যা গুলো লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি, এর একটা সমাধান হবে।
উল্লেখ্য, ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে মঞ্জুরীকৃত চিকিৎসকের পদ সংখ্যা ৫৮ জন। এর বিপরীতে কর্মরত আছে ৩৫ জন। বাকী ২৩টি পদ শুন্য রয়েছে। কিন্তু এই জনবলের অনুমোদন আজও মেলেনি। নার্স ও দ্বিতীয় শ্রেণির অনুমোদিত ১৫১ পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১৪৪ জন। তৃতীয় শ্রেণির ৪০ পদের বিপরীতে কর্মরত ১৮জন এবং চতুর্থ শ্রেণির ২৪ পদের বিপরীতে কর্মরত ১৮ জন। মোট ২৭৩ পদের বিপরীতে ৫৮টি পদ শূন্য রয়েছে। গত সাত বছরেও ২৫০ শয্যার জনবল কাঠামোর অনুমোদন মেলেনি। ফলে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।