ক্যান্সারে মৃত্যু হয়নি চিলির নোবেলবিজয়ী কবি নেরুদার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ক্যান্সারে মৃত্যু হয়নি চিলির নোবেলবিজয়ী কবি পাবলো নেরুদার। এমনটিই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। নেরুদার দেহাবশেষ থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে আন্তর্জাতিক গবেষক দল এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। বিবিসি জানিয়েছে, দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে সন্দেহ আর অবিশ্বাসের মধ্যে শুক্রবার একদল ফরেনসিক গবেষক দাবি করেছেন, প্রস্টেটের ক্যান্সারে মৃত্যু হয়নি নেরুদার। এর ফলে ১৯৭১ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী নেরুদার মৃত্যু ঘিরে রহস্য নতুন মোড় নিয়েছে। ঠিক কী কারণে নেরুদার মৃত্যু হয়েছে, সেই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি গবেষক দল। তবে তাকে পরিকল্পিত খুনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। ১৯৭৩ সালে কমিউনিস্টতার মৃত্যুর পর জানানো হয়েছিল নেরুদা প্রস্টেটের ক্যান্সারে মারা গিয়েছেন। কিন্তু একনায়ক অগাস্টো পিনোশের ক্ষমতা দখলের দুই সপ্তাহের মধ্যে নেরুদার মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছিল তখনই। কমিউনিস্ট নেরুদার প্রাক্তন গাড়িচালক ম্যানুয়েল আরায়া দাবি করেছিলেন- ক্যান্সার নয়, বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে এই কবিকে। তার দাবি, নেরুদা যখন ঘুমে ছিলেন, তখন তার দেহে ইনজেকশনের মাধ্যমে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছিল। আর এতেই ‍মৃত্যু ঘটে নেরুদার। ২০১৩ সালে বিসিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও আরায়া বলেছিলেন, ‘নেরুদাকে হত্যাই করা হয়েছে। মৃত্যুর আগেও আমি এই কথা থেকে একচুলও নড়ব না।’ প্রসঙ্গত, চিলির জাতীয়তাবাদী নেতা সালভাদর আলেন্দের সরকারকে হটিয়ে পিনোশের ক্ষমতা দখলের ১২ দিন পর ১৯৭৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে মৃত্যু ঘটে কবি নেরুদার। ১৯৭১ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী নেরুদা ছিলেন আলেন্দের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পিনোশে ক্ষমতা দখলের পর নেরুদাকে মেক্সিকোতে নির্বাসনে পাঠাতে চেয়েছিলেন। নেরুদা দেশ ছাড়তে রাজি না হওয়ায় তাকে হত্যা করা হয় বলে দাবি করেন তার গাড়িচালক আরায়া। এরপর থেকে নেরুদার মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক চলে আসছিল। ২০০৬ সালে পিনোশে মারা যাওয়ার পর নেরুদার মৃত্যুর তদন্তের দাবি জোরাল হয়ে হয়ে ওঠে। এরপর ২০১৩ সালে নেরুদার দেহাবশেষ তুলে পুনরায় পরীক্ষার আদেশ দেয় চিলির আদালত। এক সংবাদ সম্মেলনে স্পেনের ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ডা. অর্লিও লুনা বলেন, নেরুদার মৃত্যুর কারণ যে প্রস্টেটের ক্যান্সার নয়, সে বিষয়ে তারা ‘একশ ভাগ নিশ্চিত’। গবেষকরা বলছেন, এই কবি প্রস্টেটের ক্যান্সারে ভুগছিলেনি ঠিকই, তবে ৬৯ বছর বয়সে তিনি যখন মারা যান, তখন তার ক্ষেত্রে তা জীবনহানির মতো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল না। গবেষক দলের ডা. লুনা বলেছেন, তারা নেরুদার দেহাবশেষে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া পেয়েছেন, যা গবেষণাগারে তৈরি বলে তাদের মনে হচ্ছে। মৃত্যু ঘটাতে এই ব্যাকটেরিয়াই নেরুদার দেহে প্রবেশ করানো হয়েছিল কি না, এখন সেই গবেষণা চালাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পরীক্ষার ফলাফল আসতে ছয় মাস থেকে এক বছর লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন লুনা।