নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছেন, জাতির সবচেয়ে বড় হতাশার নাম দুর্নীতি। দুর্নীতিবাজরা বেহায়া ও নির্লজ্জ। তারা রাষ্ট্র (সংসদ সদস্য) নিয়ে ব্যবসা করে।
সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের ১২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আবু সায়ীদ বলেন, দুর্নীতিবাজরা ডাকাতের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। এদের রুখতে হবে। আর ওদের মোকাবিলা বা প্রতিরোধ করতে ডাকাতের মতো হতে হবে। তা না হলে প্রতিরোধ করা কঠিন।
তিনি বলেন, রাজধানীর যানজট যেমন এই শহরকে দুঃসহ করে তুলছে, তেমনি দুর্নীতি জাতির দুঃখ। এটা এতটাই বেড়েছে যে বাংলাদেশ বারে বারে পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত জাতি হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে বলবো না। তবে উত্তরণের চেষ্টা চলছে।
দুর্নীতি আমাদের শিরদাঁড়া ভেঙে দিয়েছে বলে উল্লেখ করে অধ্যাপক সায়ীদ বলেন, প্রতিটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। এক সময় শক্তিমানরা যেমন দুর্বলকে শোষণ করতো এখন দুর্বলরাও শক্তিমানদের শোষন করে। দুর্নীতি এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে তা থেকে নিস্তার পাওয়া কঠিন। এটা যুদ্ধের মতো। সেই যুদ্ধে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এটা যদি সত্যি সত্যি শুরু করা যায় তাহলে দুর্নীতি পিছু হটতে শুরু করবে।
স্বাধীনতার পর মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর মানুষের মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় হতে দেখা যায়। সে সময় দাতাদের দেওয়া সাহায্যও লুটপাট হতো। বঙ্গবন্ধু এ কারণে বলেছিলেন চাটার দল সব চেটেুপুটে খেয়ে ফেলেছে। পরবর্তী সময় রাজনীতি দুর্নীতিপরায়ন হয়।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, এখন রাজনীতিবিদরা মনে করেন সরকার গঠন করতে পারলে সব ক্ষমতা হাতে চলে আসবে, আর বিরোধীদলে গেলে নিশ্চিহ্ন হতে হবে। বর্তমান সংসদের ৬৯ শতাংশ সদস্য ব্যবসায়ী। তারা রাষ্ট্রকে নিয়ে ব্যবসা করছেন। আর দেশের মানুষকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন।
দেশ বরেণ্য এই শিক্ষাবিদ বলেন, এখন দুর্নীতি করা গৌরব ও অহংকারের বিষয়। আজ অপরাধীরা দেশের মালিক, সম্পদের মালিক ও ক্ষমতার মালিক। আর ন্যায়বানরা চোরের মতো কোনো রকম সময় কাটায়।
দুদক সম্পর্কে আবু সায়ীদ বলেন, এ দেশে রাঘব-বোয়ালদের কিছুই হয় না। এ কারণে সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে পড়ে। খালি ছোটদের ধরলে কিছুই হবে না। দুর্নীতি সহনীয় পর্যায়ে আনা যাবে না। তবে বাংলাদেশে দুদক সব সময় চাপে থাকে। এটা আমরা অনুভব করি। দুদককে অধিক কার্যকর করতে নিজস্ব আর্মস ইউনিট ও পৃথক প্রসিকিউশন থাকা প্রয়োজন।
সভাপতির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, মানুষের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তিকে বিবেচনা করলে হতাশ হতে হয়। কারণ প্রাপ্তির হার একেবারেই নগণ্য। দেশের দুর্নীতির মহাযজ্ঞ রুখতে আমরা প্রতিরোধের ওপর বেশি জোড় দিয়েছি। আজকের শপথ কাগজে কলমে না হয়ে যেন বাস্তবের শপথ হয়।
অনুষ্ঠানে কমিশনের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শপথবাক্য পাঠ করান দুদক চেয়ারম্যান। আলোচনা অনুষ্ঠানে কমিশনার (অনুসন্ধান) নাসিরউদ্দিন আহমেদ, কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামালসহ দুদকের মহাপরিচালকরা বক্তব্য রাখেন।