মাগুরা : হেমন্ত প্রায় শেষ। পঞ্জিকার হিসাবে পৌষ আসতে কয়েকদিন বাকি। শীতের প্রকোপ বাড়ছে। বিশেষ করে গ্রামে। ভোরে কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে পথঘাট, মাঠপ্রান্তর। শিশির জমছে ঘাসে। ডালে ডালে শীতের হাওয়ার নাচন, পূর্বাভাস দিচ্ছে হাড়কাঁপানো শীত সমাগত।
মাগুরার চারটি উপজেলায় শীত জেঁকে বসতে শুরু করেছে। রাতে শিশির ঝরছে। জনজীবনে শীতের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। গরিব মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। বেশ বেলা হলে সূর্যের দেখা মিলছে।
মানুষজন ছুটছে গরম কাপড়ের দোকানে। হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। কোথাও কোথাও ঘন কুয়াশার কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।
শালিখার তালখড়ি এলাকার অটোরিকশাচালক আমজাদ হোসেন বলেন, কুয়াশায় ১০ হাতের মধ্যেও কিছু দেখা যায় না। যেকোনো সময় বিপদ হতে পারে।
ভোরে ভেজা রাস্তা দেখে মনে হয়েছে, রাতে এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। অসহায় দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। দিন মজুরেরা কাজে বের হতে পারছে না। শহরের ফুটপাতসহ লেপ-তোশক ও শীতবস্ত্রের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বেড়ে গেছে।
জেলা সদরের বেলনগর এলাকার কৃষিশ্রমিক শুকুর মিয়া (৫২) বলেন, ‘ঠান্ডার কারণে ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। কিন্তু কাজ না করলে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে খাব কী? সে কারণে কাজ করতে হচ্ছে।’
আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, এক সপ্তাহ পর থেকে তাপমাত্রা আরও কমতে শুরু করবে। এবার ঠিক সময়েই শীত নামবে বলে তারা মনে করছেন।
গত কয়েকদিন মাগুরা সদর, শ্রীপুর, শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলায় ঠান্ডার প্রকোপ বেড়েছে। ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টা শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য খারাপ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। লোকজন বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হন। গরম কাপড় ব্যবহার, বাসি ও ঠান্ডা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সদর আধুনিক হাসপাতালের বহির্বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে বহু শিশু ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।
শুক্রবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, শীতবস্ত্রের অভাবে দরিদ্র লোকজন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অনেকে বাড়ির উঠানে খড়কুটোর আগুন জ্বালিয়ে শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন। সরকারিভাবে কম্বল বিতরণ শুরু হলেও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের মৌশা আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকরা আবেজান বেওয়া (৬৬) শীতে কাঁপছিলেন। তিনি বলেন, ‘সরকার বোলে মেলা মানষিরে কম্বল দেয়। আমারে এটটা আনে দিও…।’
মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. মো. মকছেদুল মোমিন বলেন, শীতে ঠান্ডাজনিত অসুখবিসুখ বেড়ে যায়। তবে এ বছর আক্রান্তের হার এখনো মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছায়নি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক পার্থ প্রতীম সাহা জানান, ঠিক সময়ে শীত আসা কৃষির জন্য সুখবর। সময় মতো শীত নামলে গমসহ বিভিন্ন রবি শস্যের ভালো ফলন পাওয়া যায়।