উন্নয়নের ঘোষণাপত্র অনুমোদন করেছে আ.লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত দেশে উন্নয়নে যেসব পরিকল্পনা করেছে সম্মেলনে তার একটি ঘোষণাপত্র অনুমোদন করা হয়েছে।

রোববার বিকেলে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চত্ত্বরে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় দিনের কাউন্সিল অধিবেশনে এটি অনুমোদন করা হয়।

উন্নয়ন পরিকল্পনার কিছু চুম্বক অংশ কাউন্সিল অধিবেশনে তুলে ধরেন ঘোষণাপত্র উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন উপলক্ষে এ ঘোষণাপত্র তৈরি করা হয়। এতে ১০টি খাতে করণীয় বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং পরিকল্পনার চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন ও মেগা প্রকল্পগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। নতুনভাবে গ্রহণের চেয়ে চলমান প্রকল্প দ্রুত শেষ করার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এতে দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে তুলে ধরে তার সব অর্জন ও পুরস্কারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত শিক্ষা অংশে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার ছয়টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। আগামীতে আরো সাতটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ১ হাজার কোটি টাকার স্থায়ী তহবিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে। দেশের শিক্ষার হার ৭১ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে একটি বিদ্যালয়কে মডেল বিদ্যালয়ে পরিণত করার কাজ চলছে।

প্রথমবারের মতো সব দলের সঙ্গে আলোচনা ও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি। নির্বাচন কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা ও জনবল নিয়োগের কর্তৃত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে সরকারের জিরো টলারেন্সের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এ মনোভাবের কারণে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূল হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। এ ছাড়া যুদ্ধপরাধীদের বিচার, বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার, কোকোর সিঙ্গাপুরে প্রচার করা অর্থ ফেরত আনার বিষয়গুলো আইনের শাসন অংশে উল্লেখ থাকবে।

যোগাযোগ : দ্বিতীয় কাঁচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতী সেতু নির্মাণের কাজ শিগগিরই শুরু হবে। ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। নির্মাণাধীন শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল সেতু, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শেষ করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সরকার : কেন্দ্রীয় সরকারের কোন কোন কাজ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে অর্পণ করা যায়, তা সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে দায়িত্ব বিভাজন সুনির্দিষ্ট করা হবে। ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি প্রশাসনিক সংস্কারের বিষয়েও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় সরকার ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রাজস্ব বিভাজনের একটি ন্যায্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হবে।

বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য ম্যানুফ্যাকচারিং খাতকে একটি পরিপূর্ণ শিল্প ব্যবস্থায় নেওয়া হবে। কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণকে সর্বাধিক সুযোগ দেওয়া। কৃষি প্রক্রিয়াজাত যন্ত্রপাতি ও উপকরণ আমদানিতে শূন্য কর সুবিধা দেওয়া হবে।

পর্যাপ্ত জ্বালানি, বন্দর ও পরিবহন অবকাঠামোর সংস্থান করা। শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চতকরণ। আইন ও বিধিমালা ব্যবসাবান্ধব হিসেবে তৈরি করা।

বৃহৎ প্রকল্প (মেগাপ্রজেক্ট) বাস্তবায়ন : দেশের উন্নয়নের চাকায় নতুন গতি সঞ্চারের জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রকল্প তথা ‘সজোরে ধাক্কা’ (বিগ পুশ) দেওয়ার জন্য ১০টি অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো- পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা দ্রুত গণপরিবহন, এলএনজি ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট, মাতারবাড়ী ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন।

১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৫৬টি (সরকারি খাতে ৪২টি এবং বেসরকারি খাতে ১৪টি) অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাতটির বাস্তবায়ন কাজ চলছে। আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। এর মাধ্যমে অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলার আয় বৃদ্ধি ও ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

২০২১ সালের মধ্যে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ৫১৪ কিলোওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে ৯৬ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে ২০ হাজার মেগাওয়াট থেকে বাড়িয়ে ২৪ হাজারের টার্গেট করা হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ আইসিটি আয় ২ বিলিয়ন এবং রপ্তানি আয় ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীতকরণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। আইসিটি শিল্পের জন্য ১ বিলিয়ন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মানবসম্পদ তৈরি করা। ২০২০ সালের মধ্যে টেলিঘনত্ব ১০০ শতাংশ, ইন্টারনেট বিস্তার ১০০ শতাংশ এবং ব্রডব্যান্ড ৫০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা থাকছে।

‘সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’- কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এটাই নীতিই থাকছে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমার মীমাংসাকে পররাষ্ট্রনীতির বিরাট মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ১১১টি ছিটমহলের ১৭ হাজার ১৬০ দশমিক ৬৩ একর জমি বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে আনা, লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া, অধিক সংখ্যক জনসমাবেশ ঘটিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে গিনেজ বুকে স্থান করে নেওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

যুবশক্তিকে উৎপাদনশীল ও আয়বর্ধনমূলক কাজে নিয়োজিত করে দেশে বেকারত্বের হার কমানোর পরিকল্পনা থাকবে। কৃষি, শিল্প ও অকৃষি খাতে কর্মসংস্থাণের পাশাপাশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ ও স্বল্পদক্ষ শ্রমশক্তি বিদেশে পাঠানোর সুযোগ সৃষ্টি করাকে সর্বোচ্চ অগ্রধিকার দেওয়া হয়েছে।

২০২০ সালে উচ্চশিক্ষায় নারী-পুরুষের অনুপাত ১০০ শতাংশে উন্নীতকরণ। অর্থনীতি, সামাজিক এবং রাজনীতিসহ সব পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।