নেত্রকোনার ছয় রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ

নিজস্ব প্রতিবেদক : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের   মামলায় নেত্রকোনার ছয় রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী ২৪ জানুয়ারি আদেশ দেবেন ট্রাইব্যুনাল।

বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ আদেশের জন্য এ দিন ধার্য করেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নী। আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী গাজী এম এইচ তানিম।

আদালত গত ২২ ডিসেম্বর এ মামলায় পলাতক পাঁচ আসামির জন্য অ্যাডভোকেট গাজী তানিমকে আইনজীবী নিয়োগ করেন।

আসামিরা হলেন- শেখ মো. আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মওলানা (৬৬), মো. আব্দুল খালেক তালুকদার (৬৭), মো. কবির খান (৭০), আব্দুর রহমান (৭০), আব্দুস সালাম বেগ (৬৮) ও নুরউদ্দিন   (৭০)।
ছয় আসামির মধ্যে গত বছরের ১২ আগস্ট গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন আব্দুর রহমান। বাকি পাঁচজন পলাতক।

২২ মে ছয়জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন। ১৬ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আটজন নিরীহ মানুষকে অপহরণের পর হত্যা, তিনটি বাড়ির মালামাল লুট, আটটি ঘরে অগ্নিসংযোগ ও একজনকে ধর্ষণের অভিযোগ।

২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ১ বছর ১ মাস ৫ দিনে আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহান কবির।

আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট দুপুর ১টায় রাজাকার বাহিনী নিয়ে বাড়হা গ্রামের আব্দুল খালেককে গুলি করে হত্যার পর কংস নদীর পানিতে ভাসিয়ে দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয় ২০১৩ সালে।

শহীদ আব্দুল খালেকের ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। বাদী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির মামলায় অভিযোগ করেছেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইনে কর্মরত তার বড় ভাই আব্দুল হেকিম ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলেন। রাজাকাররা এ খবর জানতে পেরে তাদের বাড়িতে গিয়ে তার বড় ভাই আব্দুল খালেককে পিঠমোড়া করে বেঁধে মুক্তিযোদ্ধা ভাইদের খোঁজ-খবর জানতে চায়।

ভাইদের কোনো খোঁজ না দেওয়ায় তখন রাজাকাররা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের ঘরে লুটপাট করে জ্বালিয়ে দেয়। পরে অস্ত্রের মুখে আব্দুল খালেককে ধরে নিয়ে গিয়ে জারিয়া রাজাকার ক্যাম্পে দুই দিন আটক রেখে নির্যাতন চালায়। পরদিন ২১ আগস্ট তাকে জারিয়া কংস নদীর পাড়ে গুলি করে হত্যা করে ভাসিয়ে দেয় রাজাকাররা।