ভোলায় পল্লী বিদুৎতের অবৈধ বিদুৎ লাইনের নির্মমতায় শিকার ৯ বছরের শিশু লিয়া ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে

ভোলা প্রতিনিধি ।
দ্বীপজেলা ভোলার সদর উপজেলার ১৩ নং দক্ষিন দিঘলদী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের দক্ষিন বালিয়া গ্রামের নেয়ামতপুর হাইস্কুল সংলগ্ন গ্রামে এক দরিদ্র দিনমজুরের নয় বছরের মেয়ে ভোলা পল্লী বিদুৎতের অবৈধ নিয়ম বহির্ভুতভাবে টানা লাইনের নির্মমতার শিকার হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারী ইউনিটের ৪র্থ তলার মহিলা ওয়ার্ডের ১১ নং বেডে চিকিৎসাধীন হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।এই সসম্পর্কে পল্লী বিদুৎতের জিএম কেফায়েত উল্লাহর সাথে কথা বলে জানা যায়।
দিনমজুর মোঃ ফিরোজ মিয়া ও তাহার স্ত্রী মাফিয়া বেগমের ৪ মেয়ে ২ ছেলের মধ্য লিয়া তৃতীয়।লিয়া স্থানীয় নেয়ামতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষস্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী। লিয়ার পিতা মোঃফিরোজ মিয়া চট্রগ্রামে একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানীতে নির্মান শ্রমিকের কাজ করেন। লিয়া ছোটবেলা থেকে তার নানা বাড়ি থাকতেন তার নানা মরহুম আঃ সাত্তারের ঐ বাড়িতে প্রায় ২৫ বছর পর্যন্ত স্থায়ী ভাবে বসবাস করে আসছেন। কারো বসত ঘরের উপর দিয়ে বাসার ছাদ বা টিনের চালের উপর দিয়ে কোন বিদুৎ লাইন টানানো অবৈধ হলেও সাত মাস পুর্বে লিয়ার নানার বাসার সামনের বারান্দার টিনের চালের মাঝ বরাবর উপর দিয়ে ভোলা পল্লী বিদুৎ এর লাইন টানা হলে লিয়ার নানার পরিবারের সদস্যদের বাধাকে অমান্য করে এক পর্যায়ে জোরপুর্বক পল্লী বিদুৎ এর লোকজন বিদুৎ লাইন বসত ঘরের সামনের বারান্দার টিনের চালের ২ ফুট উপর দিয়ে লাইন টানিয়ে নেয়।
গত মার্চ মাসের ২৭ তারিখ লিয়া সামনের বারান্দার টিনের চালে পাশে থাকা আম গাছ দিয়ে খেলার ছলে টিনের চালে উঠা মাত্রই বিদুৎস্পৃস্ট হয়। তাৎক্ষনিক ভোলা সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সংশ্লিস্ট ডাক্তার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারী ইউনিটে রেফার্ড করেন। ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির পরই লিয়ার দুই পায়ের মাঝের তিনটি করে আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়।এরপর বাম হাত অপারেশন করে বাম হাতটি কব্জির উপর হতে সম্পুর্ন কেটে ফেলা হয়।বর্তমানে লিয়া বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারী ইউনিটের মহিলা ওয়ার্ডের ১১ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।প্রতিবেদক লিয়াকে দেখতে গেলে অপলক দৃস্টিতে তাকিয়ে থেকে ব্যথার যন্ত্রনায় কিছুক্ষন পর পর ওর আম্মাকে ডাক দেয়,আর মাঝে মাঝে বলে উঠে আম্মু আমার হাতটি লাগিয়ে দেও, আমি আর সহ্য করতে পারছিনা। লিয়ার আম্মু মাফিয়া বেগম দুই চোখের অশ্রু ছেড়ে বলেন” আমি ওরে এই বলে সান্তনা দিচ্ছি যে তোমার হাতের ব্যান্ডেজ ভাল হলে ডাক্তার তোমার পুরো হাত আবার লাগিয়ে দিবে।একথা বলে তিনি কেদেঁ উঠে বলেন “এখন ওর কি হইবো” কি ওর ভবিষ্যত, ও মেয়ে মানুষ।তখন উপস্থিত লিয়ার বাবা ফিরোজ মিয়া হাউমাউ করে কেদেঁ উঠেন। তাদের কান্নায় আশে পাশের বেডে অবস্থানরত দর্শনার্থীদের চোখ মুছতে দেখা যায়।কান্নাজড়িত কন্ঠে লিয়ার মা,বাবা বলেন পল্লী বিদুৎ অফিসে আমরা লোক পাঠিয়ে খবর দিয়েছিলাম।আজ এক মাস সাত দিন হলেও তাহারা কোন খোঁজ খবর নেন নি।যদি আমরা বড় লোক হতাম আমাদের টাকা থাকত তাহলে দেখতেন এত বড় একটা ঘটনা ঘটলে কত কিছুই হয়ে যেত ভোলায়।আজ আমরা গরীব মানুষ বলে আমাদের কথার কোন মুল্য নাই।ঐ এলাকার সমাজ কর্মী মোঃ জাহিদুল ইসলাম রিপন অভিযোগ করে বলেন পল্লী বিদুৎ অফিসে আমি নিজে গিয়ে জানিয়েছি এ ঘটনা, বলেছি বিদুৎ লাইন সরাতে তাহারা আমাদের কাছে লাইন সরাতে উল্টো সার্ভিস চার্জ বাবদ টাকা দাবী করেন।নেয়ামতপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ রিয়াজ বলেন এটি অত্যন্ত অমানবিক একটি ঘটনা।পল্লী বিদুৎ কারো বসত ঘরের উপর দিয়ে লাইন টানতে পারেনা।ওরা বাধা দিলেও তাতে কর্নপাত করেনি পল্লী বিদুৎ এর সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ।আমরা স্কুল হতে লিয়াকে চিকিৎসার জন্য সহযোগীতা করেছি।
এত বড় একটি নির্মম ঘটনার পর এক মাস পেরিয়ে গেলেও পল্লী বিদুৎ অফিস লাইনটি পর্যন্ত সরায়নি। এ বিষয়ে ভোলা পল্লী বিদুৎ এর জিএম কেফায়েত উল্লাহর নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি না জানার ভান করেন।তাহাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রতিবেদক হতে ঠিকানা সংগ্রহ করে এক দিন সময় চান।পরবর্তীতে তাহাকে ফোন করা হলে তিনি বলেন আমি বিদুৎ লাইন সরিয়ে নিয়েছি।ঘটনার এক মাস পর সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর বিদুৎ লাইন সরালেও আপনি নিয়ম বহির্ভুত ভাবে ২৫ বছর ধরে বসবাসরত কারো বসত ঘরের টিনের চালের ২ ফুট উপর দিয়ে আপনি বিদুৎ লাইন টানতে পারেন না। এটা অবৈধ এখন এর পর্যাপ্ত ক্ষতিপুরন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নিবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আমি পল্লী বিদুৎ এর সকল কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বলে দিয়েছি সাহায্য করতে।এমন দায়সারাভাবে জিএম কেফায়েত উল্লাহ কথা বলে তাহার বক্তব্য সমাপ্ত করেন। পল্লী বিদুৎ কাছে কি শিশু লিয়ার আজীবন পঙ্গুত্ব ও ভবিষ্যতের কোন মুল্য নেই?ভোলা পল্লী বিদুৎ এর স্বেচ্ছাচারিতা,
খামখেয়ালীপনা, ও জোর পুর্বক বসত ঘরের উপর দিয়ে নিয়ম বহির্ভুত বিদুৎ লাইনের নিস্ঠুর, নির্মমতার শিকার দরিদ্র লিয়া কি পাবেনা সুচিকিৎসা,পাবেনা ন্যায় বিচার,পাবেনা কোন ক্ষতিপুরন, এ প্রশ্ন আজ ঐ এলাকার মানুষ সহ ভোলার সচেতন সুধী মহল ও বিবেকবান মানবিক মুল্যবোধসম্পন্ন মানুষের কাছে? লিয়ার চিকিৎসায় নিয়োজিত সংশ্লিস্ট ডাক্তারের সাথে আলাপ কালে জানা যায় লিয়া সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে।সুস্থ হওয়ার পর সাভারে অবস্থিত নিটোরে কৃত্তিম হাত লাগাতে ও প্রচুর টাকার প্রয়োজন।প্রতিদিন অন্তত চার হাজার টাকার ঔষধ বাহির হতে কিনে আনতে হয়।
লিয়ার বাবা মোঃ ফিরোজ মিয়ার নিজ ঘরের ভিটে ছারা আর কিছু নেই।তিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।নিজে কাজ করলে চুলায় আগুন জ্বলে, না হলে কস্টে দিনানিপাত হয় এ পরিবারের। লিয়া হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর হতে তিনি এখানে সময় দিচ্ছেন। বাড়িতে তাহার অন্যান্য ছেলে মেয়ে কিভাবে চলে তা ও তিনি জানেন না। আতœীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবের সার্বিক সহযোগীতায় লিয়ার চিকিৎসা চলমান। তাই তিনি তাহার মেয়ের চিকিৎসার জন্য ভোলার সকল বিত্তবান ব্যক্তিবর্গ সহ দেশের সকল হৃদয়বান মানুষের নিকট আর্থিক সহযোগীতা কামনা করেছেন।
লিয়ার মা,বাবার সাথে কথা বলতে চাইলে ও সাহায্য করতে চাইলে
সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা।