শীতের আমেজে ভ্রমন নালিতাবাড়ীর মধুটিলা ইকোপার্ক

মোঃ মাহফুজুর রহমান সোহাগ, নালিতাবাড়ী (শেরপুর) থেকে:  এক ঘেয়েমি জীবন, বাড়ী থেকে তেমন কোথাও যাওয়া হয় না অথবা দেশের সব জায়গায় বেড়ানো প্রায় শেষ কিংবা কিছুটা সময় নিরিবিলি নিজের মানুষকে নিয়ে খুব ঘুড়তে ইচ্ছে করলে শুধু তাদের জন্যই বাংলাদেশের সীমান্তের সবুজ বনানীর এই পাহাড়ী অ ল। আর এই জায়গাটি দেখতে চাইলে আসতে হবে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার মধুটিলা ইকো পার্কে।
শীতের এই সময়ে শেরপুরের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র নালিতাবাড়ী উপজেলায় ‘মধুটিলা ইকোপার্ক দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠতে শুরু করেছে। সীমান্তবর্তী এই বিনোদন পার্কের চারপাশে উচু-নিচু পাহাড়ী টিলা আর সবুজের সমারোহ দেখতে শীতকালিন এই সময় অথবা ঈদ পরবর্তী সময়ে ইকোপার্কটিতে বেড়ানোর দারুন সময়। এখন প্রায় প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দর্শনার্থী ও ভ্রমনপিয়াসীরা ভীড় জমাচ্ছেন।
নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তরে পোড়াগাঁও ইউনিয়নে ময়মনসিংহ বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় মধুটিলা ফরেষ্ট রেঞ্জের সমেশ্চুড়া বন বীটের আওতায় ৩শ ৮০ একর বনভূমিতে গারো পাহাড়ের মনোরম পরিবেশে সরকারীভাবে ২০০০ সালে নির্মিত হয় ‘মধুটিলা ইকোর্পাক’ পিকনিক স্পট।
এই পার্কটির প্রধান ফটক পেড়িয়ে ভেতরে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়বে সারি সারি গাছ। রাস্তার ডান পাশে খোলা প্রান্তর আর দু-পাশে রকমারি পন্যের দোকান। সামনের ক্যান্টিন পার হলেই পাহাড়ী ঢালু রাস্তা। এর পরই হাতি, হরিন, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, বানর, কুমির, ক্যাঙ্গারু, মৎস্য কন্যা, মাছ ও পাখির ভাষ্কর্য। পাশের আঁকাবাঁকা পথে ঘন গাছের সারি লেকের দিকে চলে গেছে। তারপর ষ্টার ব্রিজ পেরিয়ে পাহাড়ের চুড়ায় পর্যবেক্ষন টাওয়ারে আরোহন করলেই নজর কেড়ে নেয় ভারতের উঁচু নিচু পাহাড় আর সবুজের সমারোহ। প্রকৃতির এই নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন ভ্রমন পিয়াসীরা।
কর্তৃপক্ষ জানায়, ইকোপার্কে ঢুকতে জনপ্রতি দশ টাকায় টিকেট কাটার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে আলাদা আলাদা ফি দিয়ে পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠা, শিশু পার্কে প্রবেশের সুযোগও রয়েছে। শুধু দিনের বেলায় ব্যবহারের জন্য ভ্যাটসহ চার হাজার ৭শ ০২ টাকার বিনিময়ে পাহাড়ের চূড়ায় ৪ কক্ষ বিশিষ্ট শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) সুসজ্জিত মহুয়া নামের রেষ্ট হাউজ। এই রেষ্ট হাউজের পাশেই রয়েছে ২টি বড় রোজ বার্গ। ফুল যখন ফুটে তখন ফুলের এই বাগানে গোলাপ ফুলসহ রকমারী ফুলের সৌরভে চলে আসে নানা রংয়ের প্রজাপতি। মুহু মুহু মধু গন্ধে এই পাহাড়ী প্রজাপতির ভীড়ও অনেকে দেখার জন্য মুগ্ধ হয়ে দাড়িয়ে থাকেন। হয়তো হারিয়ে যান নিজের কোন অতীতে। ফুল আর প্রজাপতিতে বাগানটি দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। এ রেষ্ট হাউজ ব্যবহার করতে চাইলে মধুটিলা রেঞ্জঅফিস, ময়মনসিংহ অথবা শেরপুর বন বিভাগ অফিসে বুকিং দিতে হয়।
এছাড়াও এখানে রয়েছে ডিসপ্লে মডেল, তথ্য কেন্দ্র, গাড়ী পার্কিং জোন, ক্যান্টিন, মিনি চিড়িয়াখানা, বন্য প্রাণীর বিরল প্রজাতি পশু-পাখির ভাষ্কর্য। আরো আছে ঔষধি ও সৌন্দর্য বর্ধক প্রজাতির বৃক্ষ, আছে ছোট একটি মিনি চিড়িয়াখানা, শিশু পার্ক। আর তাই ভ্রমণ পিপাসু মানুষ প্রকৃতির অপার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের টানে বারবার এ পার্কে ছুটে আসে। বিনোদন ও পাহাড়ী এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য পার্কটি বিশাল ভূমিকা রেখেছে। ইকোপার্কটি সীমান্তবর্তী হওয়ায় এখান থেকে ভারতের দুরত্ব ১ কিলোমিটার। যুগ যুগ ধরে সীমান্তবর্তী এ পাহাড়ে গারো আদিবাসীরা বসবাস করে আসছেন। এখান থেকে খুব সহজে আদিবাসী গারোদের জীবনধারা ও সংস্কৃতি দেখারও সুযোগ রয়েছে।
রাজধানী ঢাকা থেকে মধুটিলা ইকোপার্কের দুরত্ব প্রায় ২শ কিলোমিটার। ঢাকা বাসস্ট্যান্ড থেকে যে কোন যানবাহনে ময়মনসিংহ হয়ে নকলা পর্যন্ত নেমে নালিতাবাড়ী দিয়ে মধুটিলায় যাওয়া যায়। এছাড়াও শেরপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী বাজার পর্যন্ত লোকাল বাস সার্ভিস রয়েছে। এছাড়াও শেরপুর থেকে ভাড়ায় সিএনজি অথবা মটরসাইকেল যোগেও মধুটিলা ইকোপার্কে আসা যায়। স¤প্রতি তৈরি হওয়া পাকা পিচ করা ফোর লেনের রান্তা দিয়ে নকলা হয়ে নালিতাবাড়ী স্থলবন্দর পর্যন্ত এক রাস্তায় দেখার সুযোগ রয়েছে। সাথে দেখতে পাবেন ভারত থেকে বয়ে আসা অপরুপ ভোগাই নদীর দৃশ্য ও নাকুগাঁও স্থল বন্দর। এছাড়াও একই রাস্তায় নাকগাঁও স্থলবন্দর দিয়ে পশ্চিম দিক দিয়ে চমৎকার সুন্দর বুরুঙ্গা ব্রীজ হয়ে পাহাড়ের ভেতরের পিচ করা রাস্তা দিয়ে দুপাশের সারি সারি বনজ বৃক্ষকে সাথি করে সীমান্ত রোড চলে গেছে মধুটিলা ইকো পার্কে। এরপর আবার এই রাস্তা দিয়েই ঝিনাইগাতীর গজনী অবকাশ কেন্দ্রেও যাওয়া যায়। সব মিলিয়ে ঈদ ও শীত মৌসুম ছাড়াও সম্ভাবনাময় এই ইকোপার্কে প্রায় সাড়া বছরই দেশি-বিদেশি পর্যটক ও ভ্রমন পিয়াসীদের ভীড় লেগেই থাকে। তাই আর সময় নষ্ট না করে পরিবার পরিজন নিয়ে চলে আসা যায় এই নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত এই পাকর্টিতে। মন ঠিক তো পৃথিবীর সব ঠিক এটা অনেকেই বলেন। এটার সত্যতা মিলবে। ইজারাদার মোহাম্মদ আলী, মোঃ রহিম উদ্দিন, উকিল মিয়া বলেন, পার্কটির যা আছে ভাল। তবে অবকাঠামো অনেক উন্নয়ন দরকার। তাহলে দর্শনার্থী আরো বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও এখান অনেক রাজস্ব আদায় হয়। মধুটিলা রেঞ্জার মোঃ করিম মিয়া বলেন, উন্নয়নমূলক অনেক কাজ বাকি রয়েছে। এগুলি শেষ করতে পারলে এটি হবে দেশের অন্যতম সেরা পার্ক।