২০ দল : নতুন ইসিতে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার প্রতিফলন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে দক্ষতা ও যোগ্যতার পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।

এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হবে না বলেও দাবি বিএনপি ও তার মিত্রদের।

মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জোটনেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিক্রিয়া জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তার পাশে জোট নেতারাও ছিলেন।

রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষে গঠিত সার্চ কমিটির পরামর্শ নিয়ে প্রাক্তন সচিব কে এম নুরুল হুদাকে নতুন নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব দিয়েছেন।

২০০৬ সালে অবসরে যাওয়া নুরুল হুদার সঙ্গে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন প্রাক্তন অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, প্রাক্তন সচিব রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কে এম নুরুল হুদা যুগ্ম সচিব হিসাবে চাকরিজীবন শেষ করেন। অতিরিক্ত সচিব এবং সচিব হয়েছেন শুধুই কাগজে। প্রকৃতপক্ষে তিনি এক দিনের জন্যও অতিরিক্ত সচিব কিংবা সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন নাই। ফলে এইসব পদে দায়িত্ব পালনের কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা তার নেই।’

তিনি বলেন, ‘অভিজ্ঞ সচিব ছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের এই ঘটনা অভূতপূর্ব। রাজনৈতিক বিবেচনা ছাড়া এমন হওয়ার কথা নয়।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা মনে করি, এমন একজন বিতর্কিত প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত কোনো প্রতিষ্ঠান নির্মোহভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। কাজেই এই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হবে না।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এমন একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের পর নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আমাদের প্রস্তাবের যৌক্তিকতা আরো দৃঢ় হয়েছে।’

নির্বাচন কমিশন গঠনে শেষ মুহূর্তে দ্রুততার সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সন্দেহের জন্ম দিয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এসব সন্দেহের মধ্যেও একটি বড় সন্দেহ হলো কাদেরকে নির্বাচন কমিশনে রাখা হবে, সেটি ছিল শাসক মহলের পূর্বপরিকল্পিত। রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন বলে প্রধানমন্ত্রী আসলে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী দুটো বিষয় ছাড়া (প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ) অন্য সব বিষয়ে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করতে বাধ্য। সংগত কারণেই আমরা মনে করতে পারি, বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রধানমন্ত্রীর পছন্দেরই প্রতিফলন ঘটেছে।’

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টিকে বিএনপি শুরু থেকেই অসীম গুরুত্বসহকারে নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম যাদেরকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে তারা হবেন সৎ, দলনিরপেক্ষ, দক্ষ, সাহসী, প্রজ্ঞাবান, কর্ম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য। এই উদ্দেশ্যেই বিএনপি চেয়ারপারসন ১৩ দফা প্রস্তাব জনগণের সামনে উপস্থাপন করেন।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সার্চ কমিটির বাছাই করা ১০ জনের নাম জনসমক্ষে প্রকাশ করলে এবং তাদের জীবন বৃত্তান্ত ও কর্ম অভিজ্ঞতা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা হলে প্রক্রিয়াটি কিছুটা হলেও স্বচ্ছতা পেত। কিন্তু তা করা হয়নি। আমরা নিরাশ ও হতাশ হয়েছি।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে অতীতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ততার অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অভিযোগ আছে, তিনি ১৯৯৬ সালে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক হিসেবে বিএনপি সরকারবিরোধী জনতার মঞ্চের একজন সংগঠক ছিলেন। অথচ কর্মরত সরকারি কর্মকর্তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে পারেন না। অন্যদিকে ২০১০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত তিনি মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড নামের সরকারি একটি প্রজেক্টের এমডি হিসাবে সরকারের লাভজনক পদে কাজ করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘এসব কারণে স্বাভাবিকভাবেই জনমনে কে এম নুরুল হুদা সম্পর্কে নেতিবাচক উপলব্ধি সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি সার্চ কমিটি এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির বিবেচনায় না নেওয়া খুবই রহস্যজনক।’

সংবাদ সম্মেলনে ২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান টি আই এম ফজলে রাব্বি চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এনডিপির খন্দকার গোলাম মুর্ত্তজা, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।