ডিবির সঙ্গে বৈঠকে বুয়েট শিক্ষার্থীরা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের (২৪) মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে বুয়েটের ৩০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে যায়।

সূত্র জানায়, ফারদিন আত্মহত্যা করেছে বলে ডিবির যে দাবি, সে বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের দেখাতেই বৈঠকে বসেছে ডিবি।

এদিকে ডিবি কার্যালয়ে যাওয়ার আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফারদিন মৃত্যুর বিষয়ে ডিবির বক্তব্যের প্রতিবাদ সমাবেশ স্থগিত করে বুয়েট শিক্ষার্থীরা।

ফারদিন মৃত্যু নিয়ে বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ জানান, ফারদিন অন্তর্মুখী ছিলেন, সবার সঙ্গে সব কিছু শেয়ার করতে পারতেন না। হতাশা থেকে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে ডিবির কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।

তিনি বলেন, মৃত্যুর সেই রাতে ফারদিন নারায়ণগঞ্জের চনপাড়ায় যাননি। সবশেষ তাকে যাত্রাবাড়ীতে দেখা গেছে। সারা রাত দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করেছেন তিনি।

ডিবি প্রধান বলেন, ‘ফারদিনের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। ফারদিন তার বান্ধবী বুশরাকে নামিয়ে দেয়ার পর ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে বেড়িয়েছেন। কেরাণীগঞ্জ ব্রিজের পাড়ে গেছেন। এ সময় অনেকের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। কিন্তু কোনো ব্যক্তিকে আমরা তার সঙ্গে দেখতে পাইনি।’

হারুন বলেন, ‘সারা রাত ফারদিন এলোমেলো ঘুরে বেড়িয়েছেন। ডিস্টার্ব মাইন্ড না থাকলে কেউ এরকম ঘুরে বেড়ায় না। রামপুরা থেকে কেরাণীগঞ্জ, কেরাণীগঞ্জ থেকে জনসন রোড, জনসন রোড থেকে গুলিস্তান, গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ী, এরপর তার নিজের বাসা পার হয়ে চলে গেলেন ব্রিজে (ডেমরা)।’

‘আমরা যে লেগুনা চালককে গ্রেফতার করেছিলাম, জিজ্ঞাসাবাদে সে কিন্তু বলেছে, কোনোভাবেই তাদের লেগুনা চনপাড়ার দিকে যায়নি। কারণ লেগুনা ২টা ৩৪ মিনিটের দিকে ফারদিনকে নিয়ে গেছে ব্রিজের কাছাকাছি। তবে চনপাড়া যায়নি এটা আমাদের তদন্তে পরিস্কার। তাকে কেউ ধরে নিয়ে গেছে অথবা তিনি নিজ থেকেই চনপাড়া গেছে এরকম কোনো আলামত বা সিসিটিভি ফুটেজও আমরা পাইনি।’

তার রেজাল্ট গ্রাজুয়ালি খারাপ হচ্ছিল। ১ম সেমিস্টারে সিজিপিএ ৩.১৫, তারপর কমতে কমতে ২.৬৭ হয়। যেটা বাসার লোকজন বা আত্মীয়-স্বজন কেউ জানতো না। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের উদ্দেশে স্পেন যাওয়ার জন্য ৬০ হাজার টাকা প্রয়োজন ছিল। যেটা জোগাড় করতে তিনি হিমশিম খাচ্ছিলেন। বন্ধুরা ৪০ হাজার টাকা দেয়। বুশরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, হতাশায় ভুগছিল ফারদিন।

‘বিভিন্ন জিজ্ঞাসাবাদ, ফারদিনের মরদেহ উদ্ধারের পর চিকিৎসক যে কথাটি বলেছিলেন, সে রকম তথ্য আমরা পাইনি। তার মারপিট বা জামা কাপড় ছেড়া ছিল না। কোথাও ধস্তাধস্তি হয়েছিল কি না বা তার শরীরে ছেঁড়াফাটা মারধরের দাগও আমরা দেখতে পাইনি। সুরতহালে কোনো আঘাতের চিহ্নও পাইনি। বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদ, মৃত্যুর রাতে তার ঢাকা শহরে ছোটাছুটি, ব্রিজের কাছ পর্যন্ত যাওয়া, হতাশা, মানসিক অবস্থা- সবমিলিয়ে আপাতত দৃষ্টিতে মনে হয়েছে এটা সুইসাইডাল কেস।’

গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিন নূর পরশের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। এ ঘটনায় বান্ধবী বুশরাসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘হত্যা করে লাশ গুম’ করার অভিযোগে রামপুরা থানায় মামলা হয়। ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা বাদী হয়ে ওই মামলা করেন। মামলার পর গত ১০ নভেম্বর ফারদিন নূর পরশকে হত্যা করে মরদেহ গুম করার অভিযোগে রাজধানীর রামপুরা এলাকার একটি বাসা থেকে বুশরাকে গ্রেফতার করা হয়।