নিজের ফেসবুক পাসওয়ার্ড জানে না রসরাজ!

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : নাসিরনগরে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার রসরাজ দাসই ফেসবুকে ছবি আপলোড করেছে কি না তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন রসরাজ পুলিশকে জানিয়েছে তার ফেসবুক আইডি থাকলেও তাতে প্রবেশের পাসওয়ার্ড তিনি নিজে জানেন না। এমনকি ফেসবুকে যখন ছবিটি দেওয়া হয় তখন তিনি বিলে মাছ ধরায় ব্যস্ত ছিলেন। নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি রেখে গিয়েছিলেন বাড়িতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ফেসবুকে ছবি আপলোডের পর তা ডিলিট করা ও ক্ষমা চেয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ার কাজটি যে অন্য এক যুবক করেছে সেটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

উত্তেজনা প্রশমন করতে রসরাজের ভাই হৃদয়ের কাছ থেকে ওই মোবাইল ফোন নিয়ে আশুতোষ নামে এক যুবক এ স্ট্যাটাস দেন। ফোন সেটে পাসওয়ার্ড সেভ করে রাখায় তিনি রসরাজের অ্যাকাউন্টে ঢুকে ওই স্ট্যাটাস দেন। যখন এই কাজটি করা হয় তখন রসরাজ গ্রেপ্তার ছিলেন।

তবে রসরাজের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মিজান জানান, রিমান্ডে রসরাজ বেশ কিছু তথ্য দিয়েছে। আমরা এখনো তার বক্তব্যের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হইনি। তবে রসরাজ স্যামসাং এর একটি অ্যানড্রয়েড সেট ব্যবহার করতেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডিবির ওসি মো. মফিজ উদ্দিন জানান, শনিবার মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর পরই আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ছবি আপলোডের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। আমরা তার কাছ থেকে যে তথ্য পেয়েছি তা যাচাই বাছাই করছি।

তবে নাসিরনগর থানার সদ্য বিদায়ী ওসি আব্দুল কাদের রসরাজকে গ্রেপ্তারের পরপর গণমাধ্যমে বলেছিলেন, রসরাজ নিজে ফেসবুকে ওই ছবি আপলোড করেছে বলে স্বীকার করেছে।

এদিকে ঘটনার পর থেকেই রসরাজের বাড়িতে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা কোথায় আছে তাও কেউ জানে না। সহকারি পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আব্দুল করিম বলেন, ‘আমরা একাধিকবার তার বাড়িতে গিয়েছি। কিন্তু তার পরিবারের লোকজনকে সেখানে পাওয়া যায়নি। তারা কোথায় আছেন সে ব্যাপারে পুলিশের কাছে কোন তথ্য নেই।’

নাসিরনগরের হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দেওয়ান আতিকুর রহমান আঁখি বলেন, ‘রসরাজ পঞ্চম শ্রেণির গন্ডি পেরুনো যুবক। তার পক্ষে এভাবে ছবি এডিট করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বিল নিয়ে দ্বন্দের জের ধরে একটি পক্ষ তাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। আমরা নিশ্চিত হয়েছি রসরাজের ফেসবুক আইডিটি স্থানীয় আরো এক যুবক ব্যবহার করতো।’

অন্যদিকে গতকাল শনিবার রসরাজের বাড়িতে যান একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের নেতত্বে ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দল।

পরে শাহরিয়ার কবির সাংবাদিকদের জানান, রসরাজের ঘরে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ছবি রয়েছে। যে মুসলমান ক্রিকেটারের ছবি ঘরে সাঁটিয়ে রাখে সে কখনো এত সাম্প্রদায়িক আচরণ করতে পারে না। তাছাড়া সে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। প্রতিবেশিদের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে রসরাজ সাম্প্রদায়িক রাজনীতির শিকার। তাকে ফাঁসানো হয়েছে।

ওই দলে থাকা প্রাক্তন বিচারপতি শাহাবুদ্দিন চৌধুরী মানিক দাবি করেন, রসরাজের পক্ষে কোন আইনজীবীকে লড়তে দেওয়া হয়নি। তার পক্ষে একজন ওকালতনামা জমা দিতে চাইলে বিচারক সেটা গ্রহণ করেননি। রসরাজের কোন কথা না শুনেই তাকে রিমান্ডে দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগে রোববার নাসিরনগরে বেশ কিছু মন্দির এবং বাড়িঘরে হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়।

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে রসরাজকে গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে নেওয়া হয়। সেখানে শুনানি শেষে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সোহাগ উদ্দিন তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ তার সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিল।